র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব)-৮ অত্যন্ত আন্তরিক ও ঐকান্তিক উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টায় টানা প্রায় ১৮ ঘন্টার সফল অভিযান শেষে ইন্দোবাংলা ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানা থেকে ১৮ লাখ টাকার অবৈধ জব্দ এবং তাৎক্ষণিক বিনষ্ট করা হয়েছে। নিষিদ্ধ এবং অনুমোদনবিহীন ওষুধ উৎপাদন এবং বাজারজাত করণের অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩ লাখ জরিমানা করে এমন অসাধু কাজ না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক রাকিবুজ্জামান। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বুধবার ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বেশ স্বচ্ছতার সাথে প্রকাশ্যে এ কঠোর পরিশ্রমমূলক অভিযানটি সম্পন্ন হয়। উপ-অধিনায়ক রাকিবুজ্জামান আরো বলেছেন, যে অবৈধ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে দীর্ঘদিন যাবত এসব ওষুধ ব্যাপক পরিমাণে বাজারজাত করেছে ইন্দোবাংলা। যে কারণে মানুষের জন্য ক্ষতিকারক এসব ওষুধ বাজার থেকে প্রত্যাহার করার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার জন্য র্যাবের পক্ষ থেকে ড্রাগ দপ্তরকে জোরালো সুপারিশ করা হয়েছে।
র্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক রাকিবুজ্জামান জানান, ইন্দোবাংলা ফার্মাসিউটিক্যালসের বিরুদ্ধে এই অসাধু কর্মের অভিযোগ পেয়ে প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন তারা। নিষিদ্ধ এবং অনুমোদনহীন ওষুধ প্রস্তুতের খবরটি নিশ্চিত হয়েই তারা বৃহৎ এ অভিযান চালিয়েছেন। অভিযানে ৮ আইটেমের বিপুল পরিমান অনুমোদনহীন ওষুধ জব্দ করা হয়। আটটির মধ্যে ২ টি আইটেম অবৈধ ও ৬ টি অনুমোদনহীন। মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও র্যাবের অভিযান চলেছে রাতভর। তারা গোটা কারখানা তন্নতন্ন করে তল্লাশি করে কোম্পানির মূল্যে ১৮ লাখ টাকার অবৈধ ও নিষিদ্ধ ওষুধ জব্দ করে তা কারখানার ভেতরেই ধ্বংস করে ভোর সাড়ে পাঁচটায় অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন। এর মধ্যে অনুমেদনহীন ৬টি ওষুধ হচ্ছে মেট্রল, ইন্দোমল প্লাস, নিওর্স্টিন আর, ইন্দোপ্রোক্স মিক্স, রেনিটিডিন, রিবোফ্লাভিন সহ ২টি নিষিদ্ধ। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রিপন বিশ্বাসের উপস্থিতিতে ওষুধ বিনষ্ট করা হয় এবং এসব ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাত করার অপরাধে ইন্দোবাংলাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানে উপস্থিত ড্রাগ সুপার তানভীর আহম্মেদ বলেন, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিটিক্যালস এর অনেক পণ্য অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরেও তারা ওষুধগুলো উৎপাদন ও বিক্রি করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের সহযোগীতা নিয়ে অভিযান পরিচালিত হয়।
র্যাবের উপ-অধিনায়ক রাকিবুজ্জামান অভিযান চলাকালে রাতে সেখানে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কোম্পানীর বিক্রয় খাতা দেখিয়ে বলেন- ইন্দো-বাংলা বিক্রয় নিষিদ্ধ ও অবৈধ বিপুল পরিমান ওষুধ বাজারজাত করেছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। অভিযানের সময় ইন্দোবাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএফএম আনোয়ারুল হক র্যাব ও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বলেছিলেন, তিনি ছাড়াও আরো কয়েকটি কারখানায় এভাবে অবৈধ ওষুধ তৈরী করা হয়। এ বিষয়ে র্যাব কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান মুঠোফোনে যুগ যুগান্তরকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কথাবার্তা ছিল অসংলগ্ন। তিনি তার বক্তব্যে একের পর এক মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। অভিযান শেষে অন্য অবৈধ ওষুধ তৈরীর কারখানার তথ্য চাইলে ওই ব্যবস্থাপনা পরিচালক তা দিতে পারেননি। অভিযানটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় তিনি জেলা প্রশাসন, ড্রাগ দপ্তর এবং বিশেষভাবে মিডিয়া কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএফএম আনোয়ারুল হক সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, জব্দকৃত অনুমোদনহীন ওষুধগুলো অনুমোদন করার জন্য সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা দেয়া হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে এখনও অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবে তিনি এসব ওষুধের অনুমোদন পাবেন বলে দাবী করেছেন। তবে জব্দকৃত অবৈধ ওষুদের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।