ভিসা ও মাস্টারকার্ড থেকে এখন খুব সহজেই কোনো ধরনের চার্জ ছাড়াই বাংলাদেশ ডাকবিভাগের ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সেবা ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে টাকা আনা যাবে। ‘নগদ’ এর অ্যাড মানি সেবার মাধ্যমে গ্রাহকরা দেশের যেকোনো ব্যাংকের ইস্যু করা ভিসা ও মাস্টারকার্ডের ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ড থেকে মুহূর্তেই তাদের নিজের ও অন্যের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে টাকা অ্যাড করতে পারবেন।
করোনা মহামারির এই সময়ে রাষ্ট্রীয় সেবা ‘নগদ’ মানুষের জীবনকে আরও সহজ করার জন্য ক্লান্তিহীন কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে একইসঙ্গে বিশ্বের অন্যতম দুটি জনপ্রিয় কার্ডের সেবা গ্রাহকদের হাতে এনে দিল ‘নগদ’। ফলে এখন থেকে চাইলেই যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে কোনো ধরনের ঝুঁকি ছাড়া ভিসা ও মাস্টারকার্ড থেকে ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে টাকা আনা যাবে।
শুক্রবার এক ওয়েবিনারের মাধ্যমে সেবাটির উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
ওয়েবিনারে তিনি বলেন, গত ১৫ মাসের যাত্রায় ‘নগদ’ নানা দিক দিয়ে দেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিই বড় ভূমিকা রেখেছে। ভিসা ও মাস্টারকার্ড ‘নগদ’ এর সাথে যুক্ত হওয়ায় তাদের সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে। অ্যাড মানির এই নতুন সেবা একদিকে যেমন গ্রাহকদের উদ্যোক্তা পয়েন্টে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা ক্যাশইন করার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেবে। অন্যদিকে ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মোবাইল রিচার্জ, সেন্ড মানি, পেমেন্ট ও ইউটিলিটি বিল প্রদানের মতো প্রয়োজনীয় সেবার ব্যবহার আরও সহজতর হবে। আমি বিশ্বাস করি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিবেচনায় ‘নগদ’ এখন বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে।
‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে টাকা আনতে অ্যাপের অ্যাড মানি অপশন থেকে ‘কার্ড টু নগদ’ তারপর মাস্টারকার্ড বা ভিসা অপশন নির্বাচন করতে হবে। পরবর্তীতে গ্রাহকের নিজের বা অন্যের ১১ ডিজিটের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট (মোবাইল) নম্বরটি দেয়ার পর কার্ডের অন্য তথ্য সংযুক্ত করতে হবে। এরপর টাকার পরিমাণ, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) ও ‘নগদ’ পিন নম্বর দিয়ে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে সহজ ও নিরাপদে টাকা চলে আসবে। পরবর্তীতে একইভাবে কার্ড থেকে টাকা আনার সুবিধা নিতে চাইলে গ্রাহক এক বা একাধিক ভিসা ও মাস্টারকার্ডের তথ্য ‘নগদ’ অ্যাপে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।
‘নগদ’ এর এই নতুন সেবার কারণে ক্যাশইন করার জন্য গ্রাহকদের আর ঝুঁকি নিয়ে উদ্যোক্তা পয়েন্টে যেতে হবে না। এই সেবা গ্রাহকদের সময় বাঁচাবে এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমাবে। এই উদ্যোগের পেছনে নগদকে সবচেয়ে বেশি চালিত করেছে মানুষের জীবনকে আরও সহজ করার প্রচেষ্টা। কারণ ‘নগদ’ বিশ্বাস করে ‘মানুষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে’।
এ উপলক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ‘নগদ’ এর ম্যানেজমেন্ট টিমকে গ্রাহকদের জন্য নতুন সেবার দ্বার উন্মোচন করায় ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন যাত্রা, সেটি সার্থকতা পাবে।
‘নগদ’ এর সঙ্গে বিশ্বের জনপ্রিয় কার্ডের অংশীদারত্বের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহকের নিরাপত্তা এবং সকল ধরনের আইন ও নীতি মেনে যেকোনো উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে। এখন দুটি কার্ড ‘নগদ’ এর সাথে যুক্ত হলো, আশাকরি সামনের দিনে অন্যরাও যুক্ত হবে।
অনুষ্ঠানে ‘নগদ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক বলেন, আমি গর্বের সাথে বলতে পারি, যে কাজটি অন্যদের আট থেকে নয় বছর লেগেছিল, সেটি ‘নগদ’ সম্ভব করেছে মাত্র এক বছর চার মাসের মাথায়। এটি সম্ভব হয়েছে মানুষের চাওয়া-পাওয়াকে অগ্রাধিকার দেয়ার কারণে। আমাদের এই অনুকরণীয় কাজের ফলে দেশের প্রতিটি মানুষ উপকৃত হচ্ছে, যা সর্বোপরি ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল এবং ভিসা কার্ডের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ডিরেক্টর (দক্ষিণ এশিয়া) সৌম্য বসু অংশ নেন।
তারা বলেন, দেশের প্রায় এক কোটি লোক এখন ভিসা ও মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে। ‘নগদ’ এর নতুন সেবার মাধ্যমে কার্ড ব্যবহারকারীরা নিজেরা যেমন সুবিধা পাবেন, তেমনি অন্য গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টেও তারা টাকা পাঠাতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে ডাকবিভাগের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র সকলকে ধন্যবাদ জানান।
গত বছর ২৬ মার্চ ডাকবিভাগের ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সেবা হিসেবে ‘নগদ’ এর অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে একের পর এক নতুন নতুন সেবা চালু করে দেশের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা খাতে বিপ্লব এনে দিয়েছে ‘নগদ’।