২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর মেরিন ড্রাইভ সড়কে প্রেমিকের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে নিহত হন ঢাকার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুদীপ্তা চৌধুরী ইমু। ওই ঘটনার পরদিন সুদীপ্তার বাবা সঞ্জিব চৌধুরী বাদী হয়ে রামু থানায় ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ এনে প্রেমিক জেকির বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু ঘটনার ৪ মাসের মাথায় আসা ময়নাতদন্ত ও হিস্টোপ্যাথলজি প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন জেকি। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ধর্ষণ ও খুনের আলমাত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
‘মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং মাথার আঘাতের কারণে সুদীপ্তার মৃত্যু হয়েছে। এরআগে তাকে ধর্ষণ করেছে এমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এটি একটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু।’ কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার মো. রাজিব হাসানসহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫ জন চিকিত্সক স্বাক্ষরিত এমন একটি প্রতিবেদন ১৭ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সক শাহীন মো. আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা আমাদের মতামত আদালতকে জানিয়েছি। মৃত্যুর আগে সুদীপ্তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে এমন কোনো আলামত আমরা পাইনি। এছাড়া এটি একটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বলে ময়নাতদন্তে জানা গেছে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগের মাইক্রোস্কোপিক প্রধান ডাক্তার শারমিনের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরিকারী কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিত্সক রাজিব হাসান জানান, নিহত সুদীপ্তার জরায়ুতে মাংসের গঠনের কোনো পরিবর্তন বা প্রশমিত হওয়ার আলামত পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং মাথার আঘাতের কারণে সুদীপ্তার মৃত্যু হয়েছে। এখানে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এছাড়া যৌনাঙ্গে শুক্রানুর অস্তিত্বও পায়নি পরীক্ষাকারীরা। অনুবিক্ষণিক যন্ত্রের মাধ্যমে এ পরীক্ষা চালানো হয়। এটি একটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মারমেইড সুপার শপের কর্মচারী ফোরকান বলেন, সেদিন আমার চোখের সামনেই চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে এক তরুণী পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। তখন আমরা তাকে উদ্ধার করে সিএনজিযোগে উখিয়াতে পাঠাই।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, জেকি’ই সুদীপ্তাকে প্রথমে উখিয়া এবং পরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালেই চিকিত্সাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সেদিন সুদীপ্তার মৃতদেহের পাশ থেকে কান্নারত অবস্থায় জেকিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ। পরে তাকে আটক দেখানো হয়।
কক্সবাজার সদর থানার তত্কালীন ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, সুদীপ্তার মৃত্যুর পর মরদেহের পাশ থেকেই পুলিশ জেকিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় আনে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছিলাম জেকি ও সুদীপ্তার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা ‘লং ড্রাইভে’ গেলে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটে। খুন করে থাকলে জেকি লাশের পাশে বসে কখনো কাঁদত না।
মামলার অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী প্রতিভা দাশ বলেন, স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও দালিলিক কাগজপত্র বলছে এটি নিছক দুর্ঘটনা। একটি দুর্ঘটনাকে হত্যা দাবি করে দায়ের করা মামলায় জেকি ৪ মাস কারান্তরীণ।
অপরদিকে নিহত সুদীপ্তার চাচা অ্যাডভোকেট শ্যামল চৌধুরী বলেন, শুনেছি প্যাথলজি রিপোর্ট আদালতে জমা হয়েছে কিন্তু চিকিত্সকরা এখনও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী দীলিপ দাশ বলেন, একটি চলমান মামলা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সমাধান হয়। আমরা সেই পথেই হাঁটব।