গত সোমবার থেকে উত্তর-পূর্ব দিল্লির এলাকাগুলো যেন রণক্ষেত্র। সদ্যপ্রণীত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধীদের বিক্ষোভে কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর মানুষজন সহিংসতা চালাচ্ছে। তাতে নিহত হয়েছেন হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের ২৪ জন। এ সহিংসতায় মসজিদ-মাজারে আগুন দিয়েছে উগ্রপন্থীরা।
উত্তপ্ত দিল্লির ওইসব এলাকায় অস্ত্রধারীদের গুলি ছুড়তেও দেখা গেছে। অনেক বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত হয়েছে দোকানপাটসহ রাস্তাঘাট। আগুনে পুড়ে গেছে যানবাহন। জাতিগত সহিংসতার এ আগুনে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। রাস্তায় তাণ্ডব চালাচ্ছেন অস্ত্রধারীরা, আগুন দিচ্ছে যত্রতত্র।
ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার সরকার সমর্থিত হিন্দুত্ববাদী সহিংসতাকারীদের সঙ্গে সহিংসতা আর তাদের কার্যপ্রণালি নিয়ে কথা বলে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। তবে সেসব কট্টরপন্থী সহিংসতাকারী ক্যামেরা বন্ধ রাখার শর্তে কথা বলেছেন দ্য ওয়্যারের প্রতিবেদকের সঙ্গে। সেই প্রতিবেদন হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্রতিবেদক: যারা নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধিতা করছে আপনারা কেন তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন?
তাদের উত্তর: আমাদের অবস্থান হলো তাদের বিরুদ্ধে যারা সিএএ’র বিরোধিতা করছে। আমাদের দেশে তাদের (পড়ুন মুসলিমদের) এমন করে বিক্ষোভ করার সাহস হয় কীভাবে? এটা কি তাদের দেশ? এটা আমাদের দেশ। তারা কি আমাদের চেয়ে বড় গুন্ডা? আমরা হলাম সবচেয়ে বড় গুন্ডা। আমাদের তাদের অবস্থান দেখাবো, তাদের তাদের ঘরেও থাকতে দেব না। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, হাসপাতালও।
প্রতিবেদক: গতকাল (মঙ্গলবার) এ এলাকার অন্যতম একটি মাজারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। কারা করেছে এটা?
তাদের উত্তর: ‘আমরা জানি না এটা কে করেছে। সম্ভবত মুসলিমরা নিজেরাই এটা করেছে।’ আরেকজন বলেন, ‘যারা এটা করেছে আমরা তার নাম আপনাকে বলতে পারি। আমরা তাদের ভালো করেই চিনি। তবে আমরা আপনাকে বলবো না। আমরা এটা করেছি; আমরা সবাই এটা করেছি। ক্যামেরা বন্ধ করেন। আমরা থাকতে একজন ব্যক্তিও পুড়বে না।
প্রতিবেদক: তার মানে, সিএএ বিরোধিতা করে যারা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে আপনারা সবাই তাদের বিরোধী?
তাদের উত্তর: সিএএ এবং এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) অবশ্যই প্রণয়ন করতে হবে। যদি সরকার আমাদের নাগরিকত্ব জানতে চায়, তাহলে আমরা তাদের নথি দেখাবো। আমাদের এখানে শুধু এদেশের মানুষরাই (পড়ুন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই) থাকবে। আমরা তাদের কেন রাখবো এখানে?
সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ কথা বলার পর সিএএ’র সমর্থক সেসব মানুষ— যারা দিল্লির সিএএ বিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়েছে, তারা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে দিতে সেখান থেকে চলে যায়।