দ. এশিয়ায় ‘জ্বলজ্বলে তারকা’ বাংলাদেশ, শেখার আছে প্রতিবেশীদের

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার সাফল্যগাথা আজ মুখে মুখে। উন্নয়নের স্রোতে এককালের সমালোচকও আজ মেতেছে বন্দনায়। বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়ে পাকিস্তানকে ছাড়িয়েছে বহু আগে, কিছুদিন আগে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকেও পেছনে ফেলেছে দেশটি। এ নিয়ে বাংলাদেশের জন্য প্রশংসাবাক্য ছুটে আসছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।

মঙ্গলবার প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ক্রমেই প্রভাবশালী হয়ে ওঠা নিয়ে একটি কলাম লিখেছেন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট মিহির শর্মা।  পাঠকদের জন্য তার লেখাটির সারাংশ তুলে ধরা হলো-

অর্ধ-শতাব্দী আগে ১৯৭১ সালের মার্চে তুলনামূলক ধনী ও অধিক শক্তিশালী পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান)। দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধের মধ্যে জন্ম নেয় দেশটি; লাখ লাখ মানুষ ভারতে পালিয়ে যান বা পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে শহীদ হন। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে সমর্থন দেয়া মার্কিনিদের কাছে মনে হয়েছিল নতুন দেশটি ব্যর্থ হবে। সেজন্য তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

চলতি মাসে বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত বছর দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ৯ শতাংশের বেশি বেড়ে দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বর্তমানে এক হাজার ৫৪৩ ডলার। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের তুলনায় পাকিস্তান ৭০ ভাগ ধনী ছিল; আর আজ বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ ভাগ ধনী। এ কারণে এক পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ সম্প্রতি বিষণ্ন মুখে বলেছেন, ‘২০৩০ সালে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের সাহায্য চাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে’।

শুধু পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিরও তুলনা করেছেন মিহির শর্মা। তার মতে, দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি থাকা নিয়ে চিরকালই আত্মবিশ্বাসী ছিল ভারত। কিন্তু এখন মানতেই হচ্ছে যে, তারা মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশের তুলনায় গরিব। ২০২০-২১ সালে ভারতের মাথাপিছু আয় মাত্র ১ হাজার ৯৪৭ ডলার।

তবে ভারত বাংলাদেশের এমন সাফল্যের স্বীকৃতি দেবে তা আশা করবেন না: দেশটির ডানপন্থী নেতারা এখনো বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ এতটাই নিঃস্ব যে, সেখান থেকে অবৈধ অভিবাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ভারতীয় রাজ্যগুলোতে যেখানে হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদরা এখনো বাংলাদেশিদের ‘উঁইপোকা’ বলে সুর চড়াচ্ছেন, সেগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ধনী বাংলাদেশ। বিষয়টি এমন যেন- কানাডা থেকে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে মিসিসিপি।

সম্ভবত এতেই স্পষ্ট হয়, জিডিপির সংখ্যা ঘোষণার সময় ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া কেন ক্ষোভ ও অস্বীকৃতির ভারে বিস্ফোরিত হয়েছিল। বিপরীতে, বাংলাদেশি মিডিয়া অনেক কমই তুলনা করেছে। তাদের মধ্যে যে ক্রমবর্ধমান আত্মবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে, এটি তারই একটি নমুনা।

ব্লুমবার্গের এ কলামে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে: রফতানি, সামাজিক উন্নয়ন ও আর্থিক দূরদর্শিতা। ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি প্রতি বছর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ করে বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে বৈশ্বিক রফতানি বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ০.৪ শতাংশ। আর এই সাফল্য এসেছে পোশাকের মতো বিশেষ সুবিধা থাকা রফতানি পণ্যে কঠোর মনোযোগের কারণে।