দ্রুত গণমাধ্যমকর্মী চাকরি শর্তাবলী আইন প্রণয়ন: প্রধানমন্ত্রী

লেখক:
প্রকাশ: ১২ মাস আগে

গণমাধ্যমকর্মী চাকরি শর্তাবলী আইন দ্রুত প্রণয়নের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যতটা স্বাধীনতা আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে, গত চৌদ্দ বছর সাংবাদিকরা যতটা স্বাধীনতা পেয়েছে, এই স্বাধীনতা কখনো কেউ ভোগ করেনি। সমালোচনা যেন আমাদের দেশের কল্যাণে হয়, দেশের ক্ষতির জন্য না হয়।

 

সোমবার (১০ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের করবী হলে অসুস্থ, অস্বচ্ছল সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে আমরা একটা ওয়েজবোর্ড কার্যকর করেছি। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনা হবে। খুব দ্রুত এটা বাস্তবায়ন করা হবে। গণমাধ্যমকর্মী চাকরি শর্তাবলী আইন সেটাও আমরা প্রণয়ন করে দেবো।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংবাদপত্রের ব্যাপকভাবে বিকশিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সরকার গঠন করার সময় সংবাদপত্র ছিল হাতেগোনা কয়েকটি। তখন অবাধে সংবাদ যাতে প্রকাশিত হতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। প্রথমে তিনটি প্রাইভেট চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি, তারপর এটি বাড়ানো হয়েছে। সেই সময় অনেকে বাধা দিয়েছিল যে, প্রাইভেটে টিভি চ্যানেল দেওয়া ঠিক হবে কি না? আমি যখনই যে কাজ করেছি সেখানে লক্ষ্য ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তখন আমি বলেছিলাম, যত বেশি টেলিভিশন দিতে পারব সেখানে সাংবাদিক থেকে শুরু করে বহু ধরনের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

 

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও এক সময় সাংবাদিকতা করেছেন। তার আত্মজীবনী পড়লে আপনারা সেটি জানতে পারবেন। শুধু সাংবাদিকতা নয়, পত্রিকা বিক্রির কাজও তিনি করেছেন। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে আমি আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য।

সাংবাদিকদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং বিপদ-আপদে আকস্মিক সহযোগিতার জন্য ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে যাতে দাঁড়ানোর ভাবনা থেকে কল্যাণ ট্রাস্ট্র আইন গঠন করে দেওয়ার কথাও জানান শেখ হাসিনা।

এ সময় পেশাগত দক্ষতায় আরও জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ।

 

সাংবাদিকদের আবাসনের বিশেষ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেককে প্লট দেওয়া হয়েছে, আবার অনেকে বিক্রিও করে দিয়েছে। সরকারিভাবে আমরা ফ্ল্যাট তৈরি করেছি, কিছু টাকা জমা দিয়ে, কোনটা ১৬ বছর, কোনটা ২৬ বছর ধীরে ধীরে টাকা জমা দিয়ে ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া যায়। সেভাবে আমরা অনেক ফ্ল্যাট তৈরি করেছি। সাংবাদিকরা চাইলে আমরা সেটা ব্যবস্থা করতে পারি।

তিনি বলে, এদেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। আমি সাংবাদিকদের বলব, তারা যদি ফ্ল্যাট কিনতে চান, সরকারি প্লট যেগুলো আমরা করেছি, আমরা বিক্রি করব।

 

অবসরে বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক…তাদের চাকরির কোনো স্থায়িত্ব থাকে না, বয়স্ক বা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের কোনো সুযোগই থাকে না। সরকারি চাকরিতে অবসর ভাতা পাওয়া যায়। আমাদের রাজনীতিবিদদের জন্য কিছু থাকে না, আবার সাংবাদিকদের জন্য কিছু থাকে না, এটা বাস্তব। এখন গণভবনে আছি ভালো কথা, তারপর কোথায় উঠব? আমি নিজের জন্য চিন্তা করি না, সবার জন্যই ভাবি।

‘আমি আপনাদেরকে (সাংবাদিক) বলব আপনারা যদি কেউ ফ্ল্যাট কিনতে চান তাহলে কিস্তিতে দেব, সেভাবে আমরা ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। যদি নিজেরাই ঘর করতে চান তাহলে একটা জায়গা নির্দিষ্ট করে দেব।’

 

সরকারপ্রধান বলেন, ৯৬ সালে সরকারের এসে আমরা দেখেছি ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিলো। আমরাই বেসরকারি খাতের জন্য বিশেষ আইন করে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে অল্প সময়ের মধ্যে ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিলাম। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে দেখি সেখান থেকে এক হাজার মেগাওয়াট নাই হয়ে গেছে। সেই ৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট থেকে আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পেরেছি। আমরা যদি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা না নিতাম তাহলে চিন্তা করে দেখেন সেটা ৩৮০০ মেগাওয়াটে থাকত। হয়ত ১০০-২০০ করে বাড়ত। কিন্তু ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ তো দেওয়া যেতো না।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন অনেকে অনেক সমালোচনা করে। কুইক রেন্টাল কেন দেওয়া হলো। হিসাবও বের করে দেয় যে এত হাজার কোটি টাকা তাদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের  অর্থনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? মাথাপিছু আয় বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় বিদ্যুৎ বন্ধ করে আমরা ৩ হাজার মেগাওয়াটে ফিরে যাই। তাহলে সমালোচকরা বুঝতো কি অবস্থা দাঁড়ায়?

গঠনমূলক সমালোচনা করা আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি সেই সমালোচনাটা গঠনমূলক হওয়া উচিত। শুধু বলার জন্য বলা না। বিরোধীদল তো বলবেই, তারা সারাদিন কথা বলে, টক শো করে, টক শোতে ইচ্ছে মতো বলে যাচ্ছে, যা খুশি তাই বলে যাচ্ছে, কথা বলার পরে বলবে কথা বলার স্বাধীনতা দেয়নি। স্বাধীনতা ছিল কখন? আইয়ুব খানের আমলে ছিল? জিয়াউর রহমানের আমলে ছিল? এরশাদের আমলে ছিল?

তিনি বলেন, ২০০১ সালের কথা একবার চিন্তা করেন, খালেদা জিয়া যখন প্রথম সরকারে এলো, দক্ষিণাঞ্চলে কি কোনো সাংবাদিক যেতে পেরেছিল? কোনো সাংবাদিক যেতে পারেনি। সেখানে এত অত্যাচার করেছিল। সাংবাদিক নিষিদ্ধ ছিল। তাদের অপকর্ম কোনো পত্রিকা লিখতেই পারত না। যে লিখত তাকে খেসারত দিতে হত। তখন স্বাধীনতাটা ছিল কোথায়?

তিনি বলেন, যতটা স্বাধীনতা আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে, গত চৌদ্দ বছর সাংবাদিকরা যতটা স্বাধীনতা পেয়েছে, এই স্বাধীনতা কখনো কেউ ভোগ করেনি। সমালোচনা যেন আমাদের দেশের কল্যাণে হয়, দেশের ক্ষতির জন্য না হয়। আমাদের দেশে কিছু বুদ্ধিজীবী আছে, যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, যতই সমালোচনা করেন, সমালোচনা থেকে যদি কোনো সংশোধন করা লাগে আমরা সেটা করে নেব। এবং আমরা সেটা করে থাকি। সেখানে আপনাদেরও কিছুটা দায়িত্ব আছে। স্বাধীনতা ভোগ করবেন, সঙ্গে দায়িত্ববোধও থাকতে হবে। দেশ ও জাতির জন্য কর্তব্যবোধ থাকতে হবে।

পরে অসুস্থ, অস্বচ্ছল সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।