দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago
দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চালু হচ্ছে রবিবার

সুলভমূল্যে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে দেশে সাবমেরিন ক্যাবলের দ্বিতীয় ল্যান্ডিং স্টেশনের উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল (এসএমডব্লিউ-৫) এবং এর ল্যান্ডিং স্টেশন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দ্বিতীয় এই সাবমেরিন ক্যাবল উচ্চ গতির নতুন মহাসড়কে দেশের সংযুক্তি নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করবে। এখন প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে ত্রুটি বা যান্ত্রিক গোলযোগ হলেও একেবারে অচল হবে না দেশের ইন্টারনেট সংযোগ। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ল্যান্ডিং স্টেশনের সংযোগের কাজ শেষ হয়। মার্চ মাস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ৪০ জিবিপিএস পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ সুবিধাসহ ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০০৬ সালে কক্সবাজারে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল স্টেশন স্থাপন করা হয়। এটি ৩০০ জিবিপিএস ক্ষমতাসম্পন্ন। কিন্তু ইতিমধ্যে ২৫০-২৬০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা হয়েছে। কুয়াকাটার দ্বিতীয় সাবমেরিন স্টেশনের ধারণক্ষমতা হলো এক হাজার ৫০০ জিবিপিএস। কক্সবাজারের চেয়ে এটি পাঁচগুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। এই সাবমেরিন স্টেশনটি চালু হওয়ায় দেশে ইন্টারনেট ও ব্যান্ডউইথের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটবে। এর ফলে বাংলাদেশের টেলিকম কোম্পানিগুলোকে আর বিদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনতে হবে না বলে সরকার আশা করছে।   উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশকে ডিজিটালাইজড করার যে পদক্ষেপ শুরু করে, এর মাধ্যমে তার একটি ধাপ পূর্ণ হলো।   বিনা খরচে বাংলাদেশ আইআইজির সঙ্গে যুক্ত হতে ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালে দুবার সুযোগ পেয়েছিল। তবে বিএনপি সরকার দেশের ‘তথ্য ফাঁস’ হয়ে যাবে এই অজুহাতে এ প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। একটি অদক্ষ সরকারের অধীনে দেশ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এটি তার সেরা নিদর্শন। প্রযুক্তি জ্ঞান না থাকায় তারা দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল। রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করে তাদের দূরদৃষ্টি না থাকলে দেশ যে পিছিয়ে যায়, তা এই মুহূর্তে জনগণ বুঝতে পারছে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল উন্নত ও দ্রুততর ইন্টারনেট সংযোগ পেতে জনগণের জন্য সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের সুরক্ষায় জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালে সাংবিধানিক সরকারের ধারাবাহিকতা ছাড়া দেশকে বর্তমান উন্নয়নের পথে নিয়ে আসা সম্ভব হতো না। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন স্বাধীনতার দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হতো। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকা শহরের একটি ক্ষুদ্র অংশ বাদে গোটা দেশ ১৯৯৬ সালে এনালগ টেলিফোন সিস্টেমের আওতায় ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গোটা দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সব সময় অবহেলিত ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া কোনো সরকারই এই এলাকার উন্নয়নের দিকে ফিরেও তাকায়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান আছে। এর মধ্যে আছে কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ ভবন, প্রশাসনিক ভবন। এখানে আমাদের দেশের এমন একটা জায়গা যেখানে দাঁড়ালে দেখা যায় সাগরের ভিতর থেকে সূর্য উদিত হচ্ছে এবং সাগরের মধ্যে সূর্য অস্তমিত হচ্ছে। এমন একটা চমৎকার জায়গা এখন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী জেলায় এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন অনেকগুলো প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- কলাপাড়া সদর থেকে টিয়াখালী ঘাট বাজার ১৭৫ মিটার দীর্ঘ সেতু, রাঙ্গাবালী উপজেলা কমপ্লেক্স এবং কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবনের সম্প্রসারণ।

এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সংসদ সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। পটুয়াখালীতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা মাহবুবুর রহমান এমপি এবং শাহজাহান মিয়া, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মাসুদুর রহমান এবং সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী অনেক মানুষ পটুয়াখালী থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন।

বিদ্যুৎ অপচয় করবেন না : সাবমেরিন উদ্বোধন শেষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ১০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, আশুগঞ্জ ৪৫০ মে.ও. নর্থ কম্বাইন্ড সাইকল, সিম্পল সাইকল প্লান্ট (উত্তর) এবং ১০৮ মে.ও. ক্ষমতাসম্পন্ন কেরানীগঞ্জ ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে রেডিয়াল মোডে অতিরিক্ত ৬০ মে.ও. বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রমও উদ্বোধন করা হয়। এ সময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে জনগণকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সারা দেশে বিদ্যুতের অপচয়রোধে প্রিপেইড মিটার অন্তর্ভুক্ত করবে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ একটি দেশ ও জনগণের সম্পদ। কাজেই আমি সবাইকে এটি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার অনুরোধ জানাব। বিদ্যুতের অপচয়রোধে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে প্রিপেইড বিদ্যুতের মিটার ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এটা হলে সিস্টেম লস হবে না।

এর ফলে আপনি যেটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন শুধু সেটুকুরই বিল আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। যেসব উপজেলা শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় এসেছে সেগুলো হচ্ছে- বাঘেরহাটের মোল্লাহাট এবং ফকিরহাট, দিনাজপুরের হাকিমপুর, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এবং সিলেট সদর, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এবং নরসিংদী জেলার নরসিংদী সদর। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন। মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।