দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) দ্বিতীয় ওয়েভ (পর্যায়) মোকাবিলায় যা যা করণীয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) বীরউত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবির ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শীতের প্রকোপ বাড়ছে, আমেরিকা ও ইউরোপে নতুন করে আবার ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমিত হচ্ছে। আপনারা প্রত্যেকে নিজে সুরক্ষিত থাকবেন। পরিবারকে সুরক্ষিত থাকার নির্দেশ দেবেন। আপনার সঙ্গে যারা বন্ধু আছে তাদের সুরক্ষিত রাখবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, যাতে করোনাভাইরাস আমাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। সে জন্য সবাই সচেতন থাকবেন।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় যে ওয়েব আসছে, করোনার যে ব্যাপকতা দেখা দিচ্ছে, সেটা মোকাবিলায় যা যা করণীয় ইতোমধ্যে এজন্য আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। তাছাড়া ভ্যাকসিন কেনার জন্য আমরা টাকা বরাদ্দ দিয়ে সেটাও নির্দেশ দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।’

‘আমাদের দেশের মানুষ সুস্থ থাকুক, উন্নত জীবন পাক, সুন্দর জীবন পাক, সেটাই জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল, আমারও সেটা লক্ষ্য। জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশে আগামী দিনে সুন্দর-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে ইনশাআল্লাহ গড়ে তুলব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্যে আমরা প্রত্যেকটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দেব, তাদের একটা ঠিকানা আমরা দেব। পাশাপাশি প্রত্যেকটি ঘরে আমরা আলো জ্বালাব, অর্থাৎ প্রত্যেকটি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাও আমরা নেব।’

দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল এ সময়ের মধ্যে আরও দুই-তিন ভাগ কমাতে পারব, করোনার কারণে সেটা হয়তো কিছুটা থেমে গেছে। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আমি ধন্যবাদ জানাই, আমাদের প্রত্যেকে যে যেখানে আছে এই করোনার সময়ও কেউ সংক্রমিত হচ্ছেন, অসুস্থ হচ্ছেন, তারপরও আন্তরিকতার সাথে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’

 

তিনি বলেন, ‘দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে, দেশটা এগিয়ে যাবে। সর্ব শ্রেণির মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য আমরা প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছি। এ করোনাভাইরাসের সময় আমরা সবাইকে আরও সহযোগিতা করছি। যাতে সবাই যার যার অবস্থানে সুরক্ষিত থাকতে পারে এবং দেশের কাজটা উন্নয়নটা চলমান রাখতে পারে। আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম, বিজিবিএম (বার), এনডিসি, পিএসসি স্বাগত বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।

কুচকাওয়াজের প্যারেড কমান্ডার হিসেবে মনোজ্ঞ প্যারেড পরিচালনা করেন ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের অফিসার ইনচার্জ মেজর কাজী মনজুরুল ইসলাম ও প্যারেড অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক বেগ আব্দুল্লাহ আল মাসুম।

এ সময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সেনাবাহিনী ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত থেকে এ সমাপনী কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন বর্ডার গার্ড ট্র্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। বিজিটিসিঅ্যান্ডসিতে প্রশিক্ষণ নেয়া মোট ৭৯১ জন রিক্রুটের মধ্যে ৫৯০ জন পুরুষ ও ২০১ জন নারী। বিজিটিসিঅ্যান্ডসি ছাড়াও ছয়টি প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের এক হাজার ৭৩৩ জন রিক্রুটসহ মোট দুই হাজার ৫২৪ জন রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভসূচনা হলো।

৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উপদেশ ও দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন। ভাষণের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তিনি মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবির ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর বিশেষ করে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ, বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক নুর মোহাম্মদ শেখ এবং মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ বাহিনীর আটজন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম ও ৭৭ জন বীরপ্রতীককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।