দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ: স্বপ্ন ছোঁয়ার কাছে

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

অবশেষে পূরণ হতে চলেছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১২ নভেম্বর কক্সবাজার রুটে বহুল কাঙ্ক্ষিত ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের ট্রায়াল হবে ২ নভেম্বর।

 

সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে দোহাজারী স্টেশন থেকে মোটর ট্রলিতে করে কক্সবাজার রেল স্টেশন পর্যন্ত পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, রেললাইনের নির্মাণকাজ সার্বিকভাবে ৯২ শতাংশ শেষ হয়েছে। শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুর শক্তিশালীকরণ, রেললাইনের সংযুক্তকরণ এবং আইকনিক স্টেশনের পরিপাটিসহ বাকি কাজগুলো শেষ হলে আগামী ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ট্রেন নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রায়াল রান করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রধানমন্ত্রী আগামী ১২ নভেম্বর এ রেললাইন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

 

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৯টি স্টেশন, ৩৯টি বড় সেতু, ২২৩টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, ৯৬ টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছে এ প্রকল্পে। হাতিসহ বন্যপ্রাণী চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ওভারপাস।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, ‘চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কয়েক বার ট্রলি করা হয়েছে। রেললাইন এখন ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত। আগামী ২ নভেম্বর ট্রায়াল করার পরে কর্তৃপক্ষ চাইলে যে কোনো দিন ট্রেন চালাতে পারে।’

 

কক্সবাজারে রেল আগমনে উচ্ছ্বসিত মানুষ
স্থানীয় তরুণ হোসাইন মোহাম্মদ মিশুক বলেন, কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল করলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অধিকতর সহজ হবে। সড়কপথে চাপ কমবে। কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা বাড়বে। রেলস্টেশনের আশপাশের এলাকা ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ রেললাইন সকলের জন্য আর্শীবাদ।

কক্সবাজার সরকারি কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তসলিমা আক্তার বলেন, ‘কক্সবাজারে ট্রেন আসবে জেনে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। কারণ আমাদের আগের বেশ কয়েক প্রজন্ম চিন্তাও করতে পারেনি কক্সবাজারে রেললাইন হবে। কিন্তু এখন ঠিকই ট্রেনের ছোঁয়া পাব আমরা।’

ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রশহর কক্সবাজার ট্রেন যেতে কর্ণফুলী নদী পার হতে হবে শতবর্ষী কালুরঘাট ব্রিজ দিয়ে। তাই ১ আগস্ট থেকে তিন মাসের জন্য কালুরঘাট সেতু বন্ধ করে শুরু হয় সংস্কার কাজ। এ কাজ শেষ না হওয়ায় গত ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ট্রেনের ট্রায়াল রান করা যায়নি। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সংস্কার শেষে পরীক্ষামূলক চলাচল হবে আগামী ২ নভেম্বর। ট্রেন চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ ও কক্সবাজারে ঝিনুক আকৃতির আইকনিক স্টেশনের বাকি কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে।

 

এই প্রথম রেলপথ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে সমুদ্রশহর কক্সবাজার। পর্যটকরা এখানে এসে শুনতে পাবেন সাগরের গর্জন, ট্রেনের ঝক ঝকাঝক ঝক শব্দ। ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের পর ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন ৪ জোড়া ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের।