দেশ যখন করোনা আতঙ্কে তখন আগৈলঝাড়া বারপাইকা যুবসমাজ মানবতার ফেরিওয়ালা

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু..’। উপমহাদেশের কিংবদন্তী গায়ক ভূপেন হাজারিকার এ কালজয়ী গানটি মনে পরে গেল যখন দেখলাম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দেশব্যাপী কর্মহীন ঘরবন্দি শ্রমজীবী মানুষ, দরিদ্র ও দুঃস্থদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য করছে কয়েকজন তরুণ। মনে হচ্ছিল মানুষের প্রতি মানুষের হৃদয়টাকে স্ফিত করে মানবিকতাকে জাগিয়ে তুলতেই যেন গানটি গেয়েছিলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তী এ গায়ক। ক্ষুধার্ত ও হতদরিদ্র মানুষদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার অনন্ত চেষ্টার খন্ড দৃশ্যগুলো যখন আমার চোখের সামনে। মহামারীতে রূপ নেওয়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি এ যেন মানবতার পরেও লড়াই। মানবিকতাবোধ জাগ্রত হয়েছে তাদের মধ্যে। মানবিকতাবোধে বরিশালের আগৈলঝাড়ার বারপাইকা যুব সমাজের উদ্যোগে চলছে কর্মহীন গরিব ও দুঃস্থদের বাঁচিয়ে রাখতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিত্যপণ বিতরণ। জাতির চরম সংকটময় মূহুর্তের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কয়েজন তরুন আর হয়ে উঠেছেন মানবতার ফেরিওয়ালা।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বারপাইকা যুবসমাজ এর শুরুটা হয় কয়েক বছর আগে মাদক নিমূলে প্রয়াস নিয়ে। সম্প্রিতি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম থেকে সাধারন মানুষকে শতার্ক করতে মাঠে নেমেছেন তারা। ‘আতংক নয়, সচেতন হোন’ এই স্লোগান ধারণ করে বারপাইকা যুবসমাজ নিম্ন-মধ্যম আয়, সাধারণ পথচারী, রিক্সাচালক, ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে জীবাণুনাশক সাবান, মাস্ক ও সচেতনতামূলক প্রচাপত্র বিতরণ করেছে।

 

আর যখন করোনা ভাইকরাস মহামারীতে রূপ নিয়েছে হয়ে উঠেছে প্রাণঘাতী ঠিক তখনি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি তারা হয়ে উঠেছেন মানবতার ফেরিওয়ালা। আর মানবতার ফেরিওয়ালা হয়েই কর্মহীন গরিব ও দুস্থদের বাঁচিয়ে রাখতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, ডাল, আলু, পেয়াজ ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করছে তারা। এ যেন তাদের মানবতার পরেও লড়াই।

 

একটা সময় মহৎ কাজটি শুরু করেছিলেন অল্প কয়েকজনে। তবে এখন তাদের দল ভারী হয়েছে। এছাড়া তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এসময়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন সমাজের বিত্তবানরাও। ‘এরাও মানুষ, ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে এগিয়ে আসুন’ ছোট্ট একটি ব্যানারে মাত্র কয়েকটি শব্দের সংমিশ্রণ। কিন্তু এমনই মানবিক আহ্বান। তাদের এই আহ্বান ছোট্ট এই ব্যানারটি পড়তেই চোখ ভিজে আসে নরম হৃদয়ের মানুষগুলোর।

 

বারপাইকা যুব সমাজ তাদের কোন কমিটি নেই। এরা নিজেদের উদ্যোক্তা বলেন। তবে তারা সবাই প্রচার বিমূখ। এই উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন, সঞ্জয় কুমার বাড়ৈ, সুশান্ত সরকার, মনোজ কির্তুনিয়া, রিপন পান্ডে, গোবিন্দ বাড়ৈ, অসিম হালদার, আশিষ বাড়ৈ, প্রকাশ বল্লভ, লক্ষন ব্যানার্জী, নিপুল কির্তুনিয়া,জয়দেব পান্ডে, সৈকত বাড়ৈসহ আরও অনেকে।

 

এমনি একজন উদ্যোক্তা সঞ্জয় কুমার বাড়ৈ জানান, আমরা চেষ্টা করেছি চলমান এই সংকটের মধ্যে ক্ষুর্ধাত মানুষের পাশে দাড়ানোর। এই কার্যক্রমকে সাগত জানিয়ে অনেকেই আমাদের পাশে এসে দাড়িয়েছেন। এজন্য আমরা তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। কেননা কোন লাভের কথা না ভেবেই করেছেন।এবং নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই এসেছেন আমাদের সাথে কাজ করতে। চলমান পরিস্থিতিতে এই কার্যক্রমকে আরো সম্প্রসারণ করার জন্য মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে হলেও চলমান সংকটে ক্ষধার্ত মানুষের পাশে সকলকে দাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

 

অন্য আর একজন উদ্যোক্তা সৈকত বাড়ৈ জানান, ক্ষুধার জ্বালা কেবল ক্ষুর্ধাতরাই জানে। সেই জায়গা থেকেই ছোট্ট পরিসরে শুরু হয়ে ছিলেন। তখন ছিল দশজনের আয়োজন। আর এখন প্রতিদিন আড়াইশ’ থেকে তিনশ জনকে দেওয়া হচ্ছে সাহায্য। মানবতার সেবায় অনেকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় আমাদের এ আয়োজনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমাদের এই কর্মকান্ড চলছে।