দেশে কৃত্রিম হার্ট প্রতিস্থাপনের স্বপ্নপূরণ: ডা. জাহাঙ্গীর

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

৪২ বছর বয়সী এক নারী রোগীর দেহে কৃত্রিম হার্ট প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর কবির।

তিনি বলেন, মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হার্ট ফেইলিওর। এ মৃত্যু রোধে দেশের মাটিতে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট হবে এটা আমাদের স্বপ্ন ছিল। তা আজ পূরণ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে কৃত্রিম হার্ট প্রতিস্থাপনের সফলতা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, এই সাফল্যের পেছনে আমাদের অনেক দিনের প্রচেষ্টা ছিল। এজন্য বিগত ১৪/১৫ বছর ধরে আমরা চেষ্টা করেছি। এমন হয়েছে যে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। কিন্তু নির্ধারিত দিন দুর্ভাগ্যবশত রোগী মারা গেছেন।

তিনি বলেন, এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রোগী ও তার পরিবারের। তারা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। এমনিতেই আস্থা না পেলে কেউ কাউকে হার্ট দেন না। আমরা আস্থা তৈরি করতে পেরেছি ও তারাও এগিয়ে এসেছেন। এ রোগী সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, এমনকি তুর্কিতেও চিকিৎসা করেছেন। পরে দেশে ফিরেও তার হার্টের অবস্থা ভালো হয়নি। তখন আমরা তাকে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রস্তাব দেই। এতে রোগী ও তার পরিবার সম্মতি দেন।

এ চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মেশিনটির দাম প্রায় এক কোটি টাকা। কৃত্রিম হার্টটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি ও অপারেশনের সময় অনেক খরচ রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় সোয়া কোটি টাকার মতো ব্যয় হতে পারে। আমাদের সদিচ্ছা আছে। সরকারসহ সবার সহযোগিতায় খরচ জনগণের আওতায় নিয়ে আসবো।

সংবাদ সম্মেলনে কৃত্রিম হার্ট প্রতিস্থাপনে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বুধবার (২ মার্চ) ওই রোগীর হৃদপিণ্ডে মেকানিক্যাল হার্ট বা লেফট ভেন্ট্রিকুলার অ্যাসিস্ট ডিভাইস (এল্ভ্যাড) স্থাপন করেন। ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও তার দক্ষ সহকর্মীরা প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় ধরে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হার্টমেট-৩ নামের একটি মেকানিক্যাল হার্ট রোগীর হৃদপিণ্ডের বাম নিলয়ে স্থাপন করেন। পরে রোগীর হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এসময়ে উন্নত বিশ্বে হার্ট ফেইলিউরের একমাত্র চিকিৎসা আরেকটি সুস্থ হার্ট প্রতিস্থাপন। তবে যদি সুস্থ হার্ট না পাওয়া যায় বা পেতে দেরি হয় তাহলে মেকানিক্যাল হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে রোগীর হার্ট কিছুটা বিশ্রাম পায় ও সমস্ত শরীরের রক্ত চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এছাড়া শরীরে অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন- কিডনি, লিভার সুস্থ হওয়ার পায়। তীব্র হার্ট ফেইলিওরে আক্রান্ত কিছু রোগী হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের উপযুক্ত না হলে একমাত্র বিকল্প উপায় মেকানিক্যাল হার্ট স্থাপন। এতে ওই রোগী বাকি জীবন সুস্থভাবে অতিবাহিত করতে পারেন।

বর্তমানে সারাবিশ্বে দশ মিলিয়নের বেশি মানুষ এ জটিল রোগে আক্রান্ত। এশিয়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব এক দশমিক ২৬ শতাংশ থেকে ছয় দশমিক সাত শতাংশ।