সব মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার যে অঙ্গীকার করেছিল সরকার, তা পূরণ হয়েছে আগেই। সোমবার (২১ মার্চ) এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে এদিন তিনি দেশের সবচেয়ে বড় পটুয়াখালীর পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিশেষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা পায়রায় পৌঁছেছেন। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
দীর্ঘ দুই বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি কোনও উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। একই দিনে কলাপাড়ায় একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা করারও কথা রয়েছে।
১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা এখন দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লাচালিত কেন্দ্রটি চীন ও বাংলাদেশ যৌথভাবে নির্মাণ করেছে। কেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়ন করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক।
পায়রা বিদ্যুৎ হাবে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি(এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট কোম্পানির (সিএমসি) ৫০ শতাংশ করে মালিকানা রয়েছে।
কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট উৎপাদন শুরু করে। এর আগে ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে।
তবে এখন পর্যন্ত এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ছাড়াও চীনের রাষ্ট্রদূত এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পায়রায় যাওয়ার কথা রয়েছে।
২৪৮ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের প্রথম উৎপাদনে আসা মেগা প্রকল্প। কেন্দ্রটি সরকারের অগ্রাধিকার ১০ প্রকল্পর তালিকায় না থাকলেও সবার আগে কাজ শেষ করে নজির স্থাপন করেছে।
এই কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ্ আব্দুল মওলা বলেন, ‘আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রীর আসার অপেক্ষা। সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, সুষ্ঠুভাবে এই কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষ করা যাবে।’
জানা গেছে, সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে। আরইবি জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মাত্র পৌনে ১২ বছরে ২ কোটি ২৯ লাখ গ্রাহককে সংযোগ প্রদান করা হয়েছে।
অর্থাৎ ২০০৮ সাল পর্যন্ত যেখানে পল্লী অঞ্চলের মাত্র ২৭ ভাগ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করতো, সেখানে বর্তমানে ৯৯ ভাগ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
আরইবি দুর্গম ও প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মধ্যে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালিসহ মোট ১০৫৯টি গ্রামে চলমান শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ করছে।
এসব প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক এই বিদ্যুৎ সুবিধা পেতে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের একমাত্র অফগ্রিড উপজেলা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালিতেও।
আরইবির এক কর্মকর্তা জানান, শতভাগ বিদ্যুতায়নই নয়, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, বাণিজ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইসিটি ইত্যাদি খাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে আরইবি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করছে।
জানা যায়, আরইবি এরইমধ্যে প্রায় ১ দশমিক ৮০ লাখ ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা, ১৩ হাজার ৫০০টি মাঝারি শিল্প কারখানা, ৩৭৫টি বৃহৎ শিল্প কারখানায় এবং ৮টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। এদিকে তিন লাখ ৬০ হাজার সেচ গ্রাহকের মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে দেশের প্রায় ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন, গৃহহীন অসহায় জনগণকে পুনর্বাসিত করার জন্য ১ হাজার ১৯২টি গ্রামের ৮৫ হাজার ৫৭০টি পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পল্লি অঞ্চলে বসবাসরত অসহায়, গরিব, দুস্থ মানুষের চিকিৎসার জন্য স্থাপিত প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক, সরকারি ও বেসরকারি ১৯৯৩টি হাসপাতালেও সংযোগ দেওয়া হয়েছে।