দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তনের আভাস দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা একটা বড় পরিবর্তন নিয়ে আসছি। যেখানে শিক্ষার্থীরা আনন্দময় পরিবেশের মধ্যে পড়াশোনা করবে।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) দুপুরে রাজশাহীতে বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন।
ভবিষ্যতে শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষাটাই হবে আনন্দময়। তারা পড়ে পড়ে শিখবে। খেলাধুলার মধ্যে শিখবে। সামাজিক কর্মকাণ্ডে শিখবে এবং শিক্ষাটা কেবলমাত্র বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকবে না। প্রকল্প করে করে তারা নানাকিছু শিখবে। এভাবে যখন শিখবে তখন সেই শিক্ষাটাকে তারা আত্মস্থ করতে পারবে। তখন আর ভুলে যাওয়ার কোনো বিষয় থাকবে না।
দীপু মনি বলেন, আমি শুধু পড়াশোনা শিখলাম, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করলাম, আমি কারিগরি বা প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করলাম, সেটাও যথেষ্ট নয়। তার সঙ্গে আরও কিছু দক্ষতা, আরও কিছু মূল্যবোধের প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক কিছুই বলি কিন্তু যাকে বলি তাকে তার মতো করে বোঝাতে পারলাম কি না তা জানি না। আমাদের যোগাযোগের এ দক্ষতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকে না। এজন্য কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে হবে, সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করার দক্ষতা থাকতে হবে, সমস্যা নিরূপণ করা এবং সমাধান করার দক্ষতা, সহযোগিতামূলক কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার দক্ষতা, নেতৃত্বের দক্ষতা এমন আরও অনেক দক্ষতা আছে যা আমাদের শিক্ষার্থীদের অর্জন করতে হবে। যেন তারা এখান থেকে বেরিয়ে দেশ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের জন্য সম্পদে পরিণত হয়। তারা যেন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে যেতে পারে।
‘সরকার সেই লক্ষ্যে নতুন এক শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের কাজ করছে। আমরা শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত ও মুখস্থ বিদ্যা থেকে বের করে সৃষ্টিশীল শিক্ষায় সুদক্ষ করতে চাই। বঙ্গবন্ধুকন্যা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছেন। এখন তিনি সামনের দিনে এ বাংলাদেশকে এক উদ্ভাবনী বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চান।’
শিক্ষা কাঠামো পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে দীপু মনি আরও বলেন, সরকার ২০১০ সালের শিক্ষানীতি সংশোধন, পরিমার্জন ও সংযোজনের কাজ করছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বয়সের যেসব জায়গায় বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করছি। পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও এ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম ওসমান গনি তালুকদার।
এছাড়া সমাবর্তনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিল আফরোজ বেগম ও ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদভুক্ত ১০টি বিভাগের ৪ হাজার গ্র্যাজুয়েটকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি দেওয়া হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় দুজন শিক্ষার্থীকে ‘চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ ও নয়জন শিক্ষার্থীকে ‘ভাইস-চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ দেওয়া করা হয়। সমাবর্তন সভাপতি ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তাদের অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।