কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে না, জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বোমাবাজি, গুলি, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, মানুষের অর্থ আত্মসাৎকারী, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারীরা কোনোদিন এ দেশে ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’
রোববার (১৯ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন (১৭ মার্চ) উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশে কোনো মানুষ অন্নের কষ্ট পাবে না, গৃহহীন থাকবে না, শিক্ষার থেকে বঞ্চিত হবে না, জানিয়ে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।’
১৯৭৫ সালের পর থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে, অভিযোগ করে তিনি বলেন, ’৯৬-তে যা অর্জন করেছিলাম, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে শুধু তা ধ্বংসই করেনি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সারাদেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, বাড়িঘর ভাঙচুর, নির্যাতন করেছে বিএনপি-জামায়াত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে। এজন্য যখনই ক্ষমতায় এসেছে, মানুষের জন্য কিছুই করেনি। জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়া এদের তো শেকড় নেই। যারা খুন-খারাবি, হত্যা-ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত, তাদের রাজনীতিতে নিয়ে এসেছে বিএনপি।
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও বাংলা ভাই সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে আর খালেদা জিয়ার সময়ে পুলিশ দিয়ে পাহারা দেয়। পাঁচবার দুর্নীতিতে দেশকে বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন করেছে। দেশ ধ্বংস করে আবার ১ কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল। এর পর দেশের মানুষের আন্দোলনের ফলে দেশে ইমার্জেন্সি হয়। বিএনপি নেতারা ক্ষমতায় থেকে এ দেশের মানুষকে কী দিয়েছে?’
বিএনপি নেতাদের সমালোচনার জবাব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ নাকি শেষ করে দিয়েছি। চোখ থাকতে অন্ধ হলে তাকে তো কিছু দেখানো যায় না। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ঘোষণা অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করে দিয়েছি। ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সর্বস্তরের মানুষের হাতে আমরা মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছি।
এ সময় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, উড়াল সেতু, এক্সপ্রেস ওয়ে, এক দিনে শত সেতু ও শত সড়ক উদ্বোধনসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিক্রমা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, জানিয়ে তিনি বলেন, বৈশ্বিক খারাপ পরিস্থিতিতে এখন বাংলাদেশ ভালো আছে।
চিকিৎসাসেবায় সরকারের বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগে বেসরকারি খাতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না। যন্ত্রপাতির আনতে অনেক খরচ হতো। আমি শুল্ক কমিয়ে দিয়ে বেসরকারি চিকিৎসা উৎসাহিত করেছি। তারা সেসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে; আবার বলে, আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি।
আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে, জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। কাজেই এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য। সামনে রমজান মাস, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এটা আমাদের সকলের নজর রাখতে হবে, কেউ যেন খাদ্য মজুত বা কালোবাজারি করতে না পারে।
বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সরকারের উন্নয়ন-অর্জন তুলে ধরার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবারের বিপুল অর্থবিত্ত কিভাবে হলো, সে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার ৪০ দিন পর্যন্ত দেখানো হলো জিয়া কিছু রেখে যায়নি। জিয়াউর রহমানের প্যান্ট ছোট করে তারেক ও কোকোকে পরাতো। একটা ভাঙা সুটকেস ও ছেড়া গেঞ্জি রেখে গেলো। তাহলে সরকারের আসতে না আসতেই কিভাবে হাজার হাজার কেটি টাকার মালিক এরা হলো?
‘কাদের টাকা চুরি করে হলো? চুরি তো চুরি, সে চুরি আবার ধরা পড়ল আমেরিকার এফবিআইয়ের হাতে। ধরা পড়ল সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতে গিয়ে। আমরা অবশ্য ৪০ কোটি টাকা ফেরত আনতে পেরেছি। এখনও বিএনপি নেতাদের বহু টাকা বিভিন্ন জায়গায় ফ্রিজ করা আছে। তাহলে এই টাকা কাদের টাকা? জনগণের টাকাই এরা পাচার করেছে। আর জনগণকে কী দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা, গুলি, খুন, হত্যা ছাড়া আর কিছু দিয়ে যেতে পারেনি। আর তাদের ভাঙা সুটকেস তো যাদুর বাক্সে পরিণত হয়ে গেলো। সেখান থেকে ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে, লঞ্চ হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে তারা বক্তৃতায় বলে যাচ্ছে, বাংলাদেশে কিছুই হয়নি। ২০০৮ সালে সরকার গঠনের আগে ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। আর এখন ৬ লক্ষ কোটি টাকার ওপর বাজেট দিয়ে যাচ্ছি। দেশের উন্নতি না হলে এই বাজেট কিভাবে দিলাম? যে সাক্ষরতার হার ৬২ ভাগে উন্নীত করেছিলাম, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে তা ৪২ ভাগে নামিয়ে এনেছিল। এখন সাক্ষরতার হার ৭৫ ভাগে উন্নীত করেছি।’
বিএনপি সরকারের শামসনামলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, কানসাটে বিদ্যুতের জন্য গুলি করে মানুষ মেরেছে। মজুরি চাওয়ার অপরাধে ২৭ জন শ্রমিককে এবং সার চাওয়ায় ১৮ জন কৃষককে গুলি করে মেরেছে।
তিনি বলেন, মানুষের কল্যাণে যা দরকার, আওয়ামী লীগ সেটাই করে। মানুষ ভালো থাকলে বিএনপি-জামায়াতের কষ্ট হয়।
বঙ্গবন্ধু শৈশব থেকেই মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন, জানিয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, তখন থেকেই এলাকায় বিপদগ্রস্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতেন। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে তার অন্তর কাঁদত। এ দেশের মানুষের ভালো জীবন পাবে সেটাই তিনি আজীবন চেয়েছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের কম সময়ে তিনি দেশকে গড়ে তুলেছিলেন।