সেলুনে চুল-দাড়ি কাটতে এসে প্রচণ্ড ভিড়ে বসে না থেকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে অভিনব কার্যক্রম শুরু করেছে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কিশোর পাঠাগার। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মহানগরীর ১০টি সেলুনে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠাগারের উদ্বোধন করা হয়েছে। যা দেশের প্রথম সেলুনভিত্তিক পাঠাগার বলে দাবি করছেন উদ্যোক্তরা। পর্যায়ক্রমে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে তিন শতাধিক সেলুনে ‘সেলুন ভিত্তিক পাঠাগার’ গড়ে তোলা হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ডের তেরখাদিয়া উপশহর এলাকায় ‘সেলুনভিত্তিক পাঠাগার’ এর উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনার।
কেন্দ্রীয় কিশোর পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা ও সেলুন পাঠাগারের উদ্যোক্তা সোহাগ আলীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসিদুল হাসান, তেরখাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিয়াকত কাদির কুমকুম,বিশিষ্ট্য সমাজসেবক রবিউল ইসলাম, ব্যবসায়ী গাজী সারোয়ার জামিল, হীরা হেয়ার সেলুনের মালিক খালিদ হোসেন হীরা প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা কিশোর পাঠাগারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান। এ ধরনের সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
সেলুনভিত্তিক বইপড়া কর্মসূচির উদ্যোক্তা ও কেন্দ্রীয় কিশোর পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সোহাগ আলী বলেন, ‘দিন দিন গণগ্রন্থাগারের পাঠক কমছে। বর্তমানে মানুষের কর্মব্যস্ততার মাঝে গ্রন্থাগারে গিয়ে বইপড়ার পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ না থাকায় আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বিনামূল্যে বইপড়া কর্মসূচি গ্রহণ করি। যাতে সহজেই পাঠক গ্রন্থাগারে না গিয়ে ঘরে বসেই বই পড়ার সুযোগ পান।’
তিনি আরও জানান, আমাদের কর্মসূচির মধ্যে ‘পলান সরকার বইপড়া আন্দোলন’ অন্যতম। যা মহানগরীতে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ১৯৯৭ সালে কেন্দ্রীয় কিশোর পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পাঠক সৃষ্টির লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।’
সোহাগ আলী বলেন, ‘আমরা আশা করছি সেলুনভিত্তিক এই শিক্ষামূলক সেবাটি প্রত্যেক পাঠকের কাছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। ভিন্নধর্মী এই আয়োজনে সবার সহযোগিতা দরকার।’
জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কিশোর পাঠাগারের কয়েকজন তরুণের উদ্যোগের কথা আমি জেনেছি। তারা যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি চমৎকার। এ ধরনের কাজে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে সিটি করপোরেশন।’
জানা যায়, মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের তিন শতাধিক সেলুনে ‘সেলুনভিত্তিক পাঠাগার’ গড়ে তোলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৪নং ওয়ার্ডে উপশহর, তেরখাদিয়া, বসুয়া, উপশহর নিউমাকের্ট, বিভাগীয় স্টেডিয়াম এলাকা, তেরখাদিয়া কলেজপাড়া এলাকায় ১০টি সেলুনে পরীক্ষামূলকভাবে সেলুন পাঠাগার কার্যক্রম শুরু করেছে কেন্দ্রীয় কিশোর পাঠাগার।
উদ্যোক্তরা জানান, সংগঠনটি সরকারি গণগ্রন্থাগারের অনুমোদিত হওয়ায় সরকারিভাবে অল্পকিছু সহায়তা পেয়ে থাকে। যা দিয়ে এ উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এজন্য বেসরকারি উদ্যোগে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।