আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলার ও অন্যান্য মুদ্রার দাম বাড়ায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। ২২ ক্যারেট অর্থাৎ সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে চার হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৪৬৫ টাকা। এর মধ্যদিয়ে মূল্যবান এই ধাতুটি দেশের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছে।
রোববার (২২ মে) থেকে স্বর্ণের নতুন এ দাম বাজারে কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি শনিবার (২১ মে) বৈঠক করে দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নেয়। পরে এ কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান এনামুল হক ভুইয়া লিটনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলার ও অন্যান্য মুদ্রার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় বুলিয়ান মার্কেটেও স্বর্ণের দাম বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে, যা ২২ মে রোববার থেকে কার্যকর হবে।’
এর আগে যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং মুদ্রা বাজারে মার্কিন ডলার ও অন্যান্য মুদ্রার দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণ দেখিয়ে গত ১৮ মে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ায় বাজুস। সেসময়ও স্থানীয় বুলিয়ান মার্কেটেও স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণ উল্লেখ করে দেশে স্বর্ণের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করা এ সংগঠনটি।
মাত্র পাঁচদিনের ব্যবধানে দুদফায় ভরিতে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ছয় হাজার টাকার ওপরে বাড়ানোর কারণে দেশের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে গেছে দামি এ ধাতুটি। নতুন মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম চার হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮২ হাজার ৪৬৫ টাকা। এর আগে দেশের বাজারে কখনো স্বর্ণের ভরি ৮২ হাজার টাকা হয়নি।
এদিকে, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম চার হাজার ২৪ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৭৩২ টাকা করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৭ হাজার ৫৩৪ টাকা করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৮৫৭ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৬ হাজার ২২০ টাকা।
স্বর্ণের দাম বাড়লেও রুপার আগের নির্ধারিত দামই বহাল রয়েছে। ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রুপার দাম এক হাজার ৪৩৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক হাজার ২২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ৯৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে ১৮ মে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৭৪৯ টাকা বাড়ানো হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৬৯১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৩৯৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৭ টাকা বাড়ানো হয়।
অবশ্য তার আগে আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় বুলিয়ান মার্কেটে দাম কমার প্রেক্ষিতে গত ২৬ এপ্রিল ও ১১ মে দুদফায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়। এরমধ্যে ১১ মে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে করা হয় ৭৬ হাজার ৫১৬ টাকা।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে ৭৩ হাজার ১৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৬২ হাজার ৬৩৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৮৭৬ টাকা কমিয়ে ৫২ হাজার ১৯৬ টাকা করা হয়।
বাজুসের সাবেক সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, এখন স্বর্ণের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তার সঙ্গে ভ্যাট ও মজুরি যোগ করলে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণ অলঙ্কারের দাম পড়বে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। দেশের বাজারে স্বর্ণের এতো দাম এর আগে কখনো হয়নি। এর আগে এক ভরি স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে এখন স্বর্ণের যে দাম তা সহনীয়। কিন্তু ডলারের দাম অস্থির। মূলত ডলারের দাম বাড়ার কারণে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। সামনে যদি ডলারের দাম কমে, তাহলে স্বর্ণের দাম কমবে। কিন্তু ডলার দাম আরও বাড়লে স্বর্ণের দামও বাড়বে।