দেনমোহরের টাকার পরিমাণ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো স্বামীর। সেই ঝগড়ার জের ধরেই স্ত্রীকে হত্যা করেন তিনি। এরপর স্ত্রীর মাথা-দেহ আলাদা করে পৃথক স্থানে ফেলে দেন। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রল’-এ নাকি দেখানো হয়েছে, শরীর থেকে মাথা আলাদা করলে লাশের পরিচয় জানা যায় না; ফলে হত্যার বিচারও হয় না। তা দেখেই এ কাজ করেন স্বামী ইব্রাহীম আলী (৩০)। শুক্রবার হত্যার দায় স্বীকার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আয়েশা বেগমের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
ইব্রাহীমের নিহত স্ত্রীর নাম ইয়াসমিন আক্তার (২২)। ইয়াসমিন আশুগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ফরিদ মিয়ার মেয়ে। ইব্রাহীম জেলা সদরের ভাদুঘর দক্ষিণপাড়ার রমজান আলীর ছেলে। পাঁচ বছর আগে নিজেদের পছন্দে তাঁদের বিয়ে হয়। মাইশা আক্তার নামে তাঁদের চার বছরের এক মেয়ে রয়েছে। বাবা-মা বিয়ে মেনে না নেওয়ায় স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে শহরের কাউতলি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন ইব্রাহীম।
নিহত ইয়াসমিনের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১৭ এপ্রিল থেকে ইয়াসমিনের সন্ধান পাচ্ছিল না তাঁর পরিবারের লোকজন। এ ঘটনায় গত ২১ এপ্রিল ইয়াসমিনের মা মনোয়ারা বেগম সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গত রোববার সদর উপজেলার নয়নপুর এলাকার তিতাস নদীতে একটি বস্তা ভাসতে দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে বস্তা খুলে মাথাবিহীন এক নারীর লাশ পায় পুলিশ। মাথা না থাকায় সেই সময় লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। মাথাবিহীন লাশটি ইয়াসমিনের কিনা, তা শনাক্ত করতে পারেননি ইয়াসমিনের মা মনোয়ারা বেগম। বৃহস্পতিবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইয়াসমিনের স্বামী ইব্রাহীমকে আটক করে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেন ইব্রাহীম। তিনি জানান, তিতাস নদী থেকে উদ্ধার করা লাশই ইয়াসমিনের। দেনমোহরের টাকার পরিমাণ নিয়ে ঝগড়ার জের ধরে ইয়াসমিনকে হত্যা করেছেন বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ইব্রাহীম বলেছেন, দেনমোহরের টাকা নির্ধারণ নিয়ে স্ত্রী ইয়াসমিনের সঙ্গে ইব্রাহীমের ঝগড়া হতো। দেনমোহর টাকা তিন লাখের পরিবর্তে ১০ লাখ টাকা করার কথা বলেছিলেন ইয়াসমিন। গত ১৬ এপ্রিল রাতে ঘুমানোর সময় দেনমোহরের টাকা নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় ইব্রাহীম ক্ষেপে গিয়ে ঘরে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে প্রথমে ইয়াসমিনের গলায় আঘাত করেন। এরপর শরীর থেকে মাথা আলাদা করে পৃথক স্থানে ফেলে দেন।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, শরীর থেকে মাথা আলাদা করলে লাশের পরিচয় জানা যায় না এবং হত্যার বিচারও হয় না—এমন ঘটনা ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রলে দেখেছেন বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন ইব্রাহীম। তবে নিহত ইয়াসমিনের মাথার অংশটি এখনো খুঁজে পায়নি পুলিশ।