#

চোখের আলো না থাকলেও পবিত্র কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফিজিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ বোডিংয়ের শিক্ষার্থীরা। রংপুর নগরীর এরশাদনগর চিনিয়াপাড়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা বায়তুর রহমান জামে মসজিদ ও ব্যতিক্রমধর্মী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ শিক্ষার্থীই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। বর্তমানে এখানে ১২ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। যাদের মধ্যে আটজনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু হয় এ প্রতিষ্ঠানটির। মাদরাসার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষক হাফেজ মো. মাহবুব এলাহী ও হাফেজ মো. খোরশেদ আলমের সঙ্গে মহৎ এ উদ্যোগ সফল করতে এগিয়ে আসেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ হোসেন। প্রতিষ্ঠানটির নামে ৬ শতক জমি দান করেন তিনি। পাশাপাশি স্থানীয়দের সাহায্য ও সহযোগিতায় কোনোরকমে চলছে মাদরাসাটি।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করছে। ওই শিক্ষার্থীদের একজন শাহাদত হোসেন (১৭) জানায়, জন্ম থেকেই সে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মাদরাসা শুরুর পরপরই রংপুরের পীরগাছা উপজেলার চৌধুরানী থেকে এসে ভর্তি হয়। এখন পর্যন্ত কোরআনের ২৫ পারা পর্যন্ত মুখস্থ করেছে সে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী থেকে ৮-৯ মাস আগে এসেছে মনির হোসেন (১৫)। শাহাদতের মতো সেও জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মাদরাসায় থেকে অন্যের সহায়তায় যা মেলে তাই খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে শাহাদত-মনিরের মতো অন্য দশজনও।

পার্শ্ববর্তী চিনিয়াপাড়া মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের খুঁজে নিয়ে এখানে ব্রেইল পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা দেয়া হয়। তাদের থাকা খাওয়ার সম্পূর্ণ ব্যয় বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে বহন করা হয়।’

প্রতিষ্ঠানটির জমিদাতা আশরাফ হোসেনের ছেলে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যক্তির অনুদানে প্রতিষ্ঠানটি চলছে। এর উন্নয়নে সরকারিভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন।’

 

ওই মাদরাসার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষক হাফেজ মো. মাহবুব এলাহী জানান, তিনিও জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে তার বাড়ি। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি মাদরাসা থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। পরে বিভিন্ন জায়গায় টিউশনি করিয়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সহযোগী হাফেজ মো. খোরশেদ আলমসহ অন্যদের সহায়তায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

নিজে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় সমাজের অন্যসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানোর উপলব্ধি থেকে এমন মহৎ উদ্যোগে সামিল হয়েছেন বলেও জানান মাহবুব এলাহী। তবে প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে সমাজের বিত্তবান মানুষসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবিও তুলে ধরেন তিনি।

বায়তুর রহমান জামে মসজিদ এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফিজিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ বোডিংয়ের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তির সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। উদ্বোধনের পর সিটি করপোরশেন থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেছে। এছাড়া সরকারিভাবে কোনো অনুদান বা সহায়তা মেলেনি।’

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন