দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো বরিশাল জেলা পুলিশ

:
: ৭ years ago

‘মাদককে না বলুন’ এই প্রত্যয়ে সারা দিয়ে অন্ধকার জগতকে পায়ে ঠেলে আলোর পথ বেছে নিয়েছেন বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১২৪ জন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। বুধবার বেলা ১২টায় বরিশালে পুলিশ লাইন্সে জেলা পুলিশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের দশ উপজেলা থেকে আত্মসমপর্ণকারীরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের চৌকস উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোঃ শফিকুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের শপথবাক্য পাঠ করান। শুরুতে আত্মসমপর্ণকারীদের ফুল দিয়ে বরণ করে হয়। পরবর্তীতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে ৫৮ জনকে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। তবে জেলা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম কয়েক মাস আগে বরিশালে যোগদানের পরপরই পূর্বের এসপি এস.এম আক্তারুজ্জামানের রেখে যাওয়া মাদক বিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম একই গতিতে অব্যাহত রাখেন। পূর্বতন এবং বর্তমান দুই জেলা পুলিশ সুপারের মাদকের বিরুদ্ধে একই রকম মানসিকতার কারণে আজকের এ সফলতা। সূত্র জানায়, বরিশালে তো বটেই, সম্ভবত সারা দেশেই এই প্রথম বারের মত এত সংখ্যক মানুষ একত্রে মাদককে ত্যাগ করার অঙ্গীকার করলেন। যার শতভাগ কৃতিত্বের দাবিদার সাবেক এবং বর্তমান দুই এসপি।
আত্মসমর্পনকারী মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরা বলেন, তারা কেউ বন্ধুদের কবলে পরে বা হতাশা থেকে মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পরেন। এতে করে তাদের পরিবারের সাথে বিরোধ ও সমাজের মানুষ ঘৃনার চোখে দেখেন। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে থানা পুলিশের সহায়তা করার আহবানে সাড়াদিয়ে তারা আত্মসমপর্ণ করেছেন। এখন থেকে তারা অন্যকেও মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করবেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, কমিউনিটিং পুলিশিং বা অন্যকোন সভায় প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মাদক। তাই সুস্থ্য জীবনে ফিরে যেতে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। বাকি যারা রয়েছে তাদেরকেও আত্মসমর্পণ করার আহবান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিববুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান, নির্বাহী অফিসার ও পৌর মেয়রগণ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা পুলিশ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১ আগস্ট মোঃ সাইফুল ইসলাম বরিশালের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করার পর থেকে তিনি জেলার ১০ থানা এলাকায় ওপেন হাউজ ডে এবং কমিউনিটি পুলিশিং সভায় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তদের অন্ধকারের পথ ছেড়ে আলোর পথে আসার আহবান জানিয়ে আসছেন। পুলিশ সুপারের সেই আহবানে সারাদিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করে আলোর পথে ফিরে আসার ক্ষেত্রে সহযোগিতা চেয়েছেন। যে কারণে পুলিশও তাদের এই সুযোগ করে দিয়ে বরিশালকে মাদকমুক্ত করতে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলামের মতে, মাদকের বিস্তার ঠেকাতে মাদক ব্যবসায়ীদের ভালও হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকলে তাকে এ সুযোগ দেয়া হচ্ছেনা। পূর্বের মাদক মামলায় জামিনে থাকলে কিংবা অভিযোগ আছে কিন্তু মামলা নেই তাদের এ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। অতীতে মাদক মামলা থাকলে বিচার হবে। সেক্ষেত্রে কোন ছাড় নয়।
উল্লেখ্য, এ জেলার মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবেখ্যাত গৌরনদী উপজেলাকে সর্বপ্রথম শতভাগ মাদক নিমূর্লের লক্ষ্যে গত ২ এপ্রিল গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে মোঃ ফিরোজ কবির যোগদান করেই স্থানীয় সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করে ঘোষনা করেছিলেন, “হয় গৌরনদীতে মাদক ব্যবসায়ীরা থাকবে, না হয় ওসি ফিরোজ কবির থাকবে”। মাদক নির্মূলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিপ্ত শপথ নিয়ে কাজ শুরু করে ওসি ফিরোজ কবিরের দিনরাত অবিরাম চেষ্টা আর অভিযানের ফলে মাত্র একমাসের মধ্যে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের তিনি (ওসি) পাকড়াও করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ওইসময় মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে থানা পুলিশ ইয়াবা, গাঁজা ও ফেন্সিডিলসহ প্রায় দেড় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছিলেন। সে সময় মাত্র একমাসের ব্যবধানে মাদক বিরোধী অভিযানে দক্ষিণাঞ্চলের প্রভাবশালী এক ইয়াবা ডিলারসহ প্রায় দেড় শতাধিক মাদক বিক্রেতা ও সেবীদের গ্রেফতার করেছিলেন ওসি ফিরোজ কবির। আর ওইসব ঘটনায় ৮৫টি মামলা দায়েরের পাশাপাশি উদ্ধার করা হয়েছিলো বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। কয়েকদিনের ব্যবধানে গৌরনদীতে যখন ৮০ ভাগ মাদক নিমূর্ল করা হয় সে সময়ই রহস্যজনক কারণে কোন অভিযোগ ছাড়াই চৌকস ওসি ফিরোজ কবিরকে গৌরনদী মডেল থানা থেকে বদলী করে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। ফলে ফের গৌরনদী এখন মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে।