বেলায়েত বাবলু:: আজ ২৩ জুন। দেশের বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগ সর্বদা মানুষের পাশে -এই দৃপ্ত শ্লোগানে এবছর সংগঠনটি গৌরবের ৭১ বছর অতিবাহিত করছে।
ইতিহাস বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ নামক সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। সে সময়ে সভাপতি নির্বাচিত হন মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানী। ঢাকার রোজ গার্ডেনে জন্ম নেয়া এ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হন টাঙ্গাইলের শামসুল হক। আর তৎকালীন ফরিদপুরের শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এ সংগঠনটি পরবর্তিতে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ হিসেবে আর্বিভূত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাহান্নোর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর সাধারণ নির্বাচন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
এদেশের স্বাধীনতা, পতাকা, মানচিত্র, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ত্যাগী, এটা বিরোধী পক্ষও অকপটে স্বীকার করে। তবে সুদীর্ঘ এই পথচলা আওয়ামী লীগের জন্য কখনোই সুখকর ছিলোনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭১ পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটাকে যখন গড়ার কাজ মন দেন, ঠিক সে সময়ে দেশবিরোধীরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। দেশের বাইরে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা প্রাণে বেঁচে যান। এরপর আশির দশকে প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণে ৯১ সালে আওয়ামী লীগ সংসদে দেশের বৃহত্তম প্রধান বিরোধী দল এবং ৯৬ এর নির্বাচনে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়।
এরপর ক্ষমতার পালাবদল হলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। তারপরেও ভয় পেয়ে বসে না থেকে শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সারা দেশব্যপী দুর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তোলেন। আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হওয়া বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি আজ অস্বিত্বের সংকটে। উল্টো দিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থেকে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে সক্ষম হয়েছেন। ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণে দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলছে।
এবছর বৈশিক মহামারী করোনায় আমাদের দেশও আক্রান্ত হয়েছে। সবকিছু মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা অতীতের ন্যায় দেশটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন। দুর্যোগ দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগ আগেরকার মতোই মানুষের পাশে থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। মহামারী শেষে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এই শুভ ক্ষণে সেই প্রত্যাশাই করছি।
করোনার কারণে এবছর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কোন আনুষ্ঠানিকতা রাখা হয়নি। করোনার মহামারি শেষ হলে মুজিব শতবর্ষের অনুষ্ঠানগুলো আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হবে। আজ যে দুর্যোগ আমরা মোকাবেলা করছি তা থেকে যেন অতি তাড়াতাড়ি আমরা পরিত্রান পেয়ে পাই।
লেখক- সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।