সফরকারী শ্রীলঙ্কার কাছে ঢাকা টেস্ট ২৩৫ রানে হেরেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ হার। যদিও চট্টগ্রাম টেস্টে ড্র হওয়ার পর ঢাকা টেস্টের উইকেট দেখে দুই দলের অধিনায়কই জয়ের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হল স্বাগতিকদেরকেই। কেন এমনটা হল!
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ভাষায়, যদি চট্টগ্রাম টেস্টের কথা ধরেন, ওখানে উইকেট ব্যাটিং সহায়ক ছিল, আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো ব্যাটিং করেছে। এজন্যই এখানে আমরা চাচ্ছিলাম, উইকেটটা স্পিন সহায়ক হোক। আমাদের ব্যাটসম্যানদের উপর আমরা আস্থা রাখি। একই সঙ্গে স্পিনারদের উপরও আস্থা রাখি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ব্যাটসম্যানরা ভালো পারফর্ম করতে পারেনি।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ইনজুরির কারণে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া রিয়াদের কথা ধরলে এভাবে ‘বুলেট উল্টো হয়ে ফেরা’য় বিস্ময়ের কিছু নেই। প্রথমত, ক্রিকেট এক ধরনের বাজি। আর বাজি মানেই অনুকূল-প্রতিকূল দুটির যে কোনো একটি হতেই পারে। দ্বিতীয়ত, বাজে ব্যাটিংয়ের দায়। স্পিনিং উইকেটে যেভাবে খেলার দরকার ছিল, সেভাবে খেলতে যেয়ে গড়বড় করে ফেলাই বড় কারণ।
অধিনায়কের এমন সকরুণ কারণ দর্শানোর পর আসলে আর কিছু বলার থাকে না। প্রথম ইনিংসে ৩ রানের মধ্যে শেষ পাঁচ উইকেট হারিয়ে ১১০’ এ অল আউট, আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ১২৩’ এ গুড়িয়ে যাওয়া ব্যটিংয়ের জুতসই জবাবই নেই অধিনায়কের কাছে।
রিয়াদের ভাষায়, 'কেন এমনটা হল এর জবাব দেওয়া আসলে কঠিন। এটা অবশ্যই খুব হতাশাজনক। এ ধরনের উইকেটে হয়তোবা আমরা তাড়া করতে পারবো বলে জানতাম। মোটামুটি সবারই ধারণা ছিল এই টেস্টে আমরা রেজাল্ট দেখবো। স্পিন সহায়ক উইকেট। প্রথম ইনিংসেই আমাদের ভালো করা উচিত ছিল। আমার মনে হয় এই জায়গাটায় আমরা পিছিয়ে গেছি। প্রথম ইনিংসে যদি ২০০ বা তার বেশি করতে পারতাম, তাহলে হয়তো আরেকটু ভালো সুযোগ ছিল। কারণ এই উইকেটে ৩৪০ রান তাড়া করতে গিয়ে অবশ্যই অতিরিক্ত চাপ ছিল।’
তাড়া করতে নামায় হয়তো দ্বিতীয় ইনিংসে চাপ ছিল, কিন্তু প্রথম ইনিংসের বিপর্যয়ের কী ব্যখ্যা, আর উভয় ইনিংসেই কেন দৃষ্টিকটুরকমের বাজে ব্যটিং, উইকেট বিলিয়ে দেওয়া? দ্বিতীয় ইনিংসে দেখা গেল মাঠে নেমেই রিভার্স সুইফ আর ডাউন দ্য উইকেটে যাচ্ছেন ইমরুল কায়েস, আউটের হাত থেকে বেঁচে গিয়েও শান্ত হচ্ছেন না মুমিনুল, মুশফিকও মাঠে নেমেই অস্থির হয়ে ব্যাট চালাচ্ছেন। ছেড়ে খেলার মানষিকতার চেয়ে মেরে খেলার মানসিকতাই দেখা গেল বেশি। যার চূড়ান্ত ফল কিন্তু পক্ষে আসেনি। অথচ এই স্পিনবান্ধব উইকেটেই রান পেয়েছে শ্রীলংকানরা। সমস্যা কি তাহলে ব্যটিং অ্যাপ্রোচেই ছিল?
রিয়াদের অবশ্য সেরকমটি মনে হচ্ছে না, বরঞ্চ দলের পরিকল্পনা নাকি ছিল আক্রমণ করে খেলা, ‘দ্বিতীয় ইনিংসের আক্রমণাত্মক খেলার কারণ ছিল। ওরা প্রথম ইনিংসেই ১১২ রানে এগিয়ে। তখন এ ধরনের উইকেটে আক্রমণাত্মক না খেললে, পজিটিভ না থাকলে, বোলারকে স্থির হওয়ার সুযোগ দিলে বিপদে পড়তে হয়। এজন্য আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় যেতে হয়। তবে এক্ষেত্রে বল নির্বাচন করতে হয় সঠিকভাবে। কোনটায় শট খেলা যাবে, কোনটায় ডিফেন্ড করা যাবে। আমাদের মধ্যে কথা ছিল ব্যাটিংয়ে ইতিবাচক থাকবো। এখানে একটা বল স্পিন হচ্ছে, একটা সোজা যাচ্ছে, একটা লোয়ার বাউন্স হচ্ছে, একটা নিচেও নামছে। সেদিক থেকে মনে হয় ডিফেন্ড করা মানে বোলারকে সুযোগ করে দেওয়া।’
রিয়াদের মতে, আক্রমণাত্মকই থাকা উচিত সবসময়, যে কারণে শ্রীলংকার স্পিনশক্তির কথা মাথায় থাকার পরও ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন তারা, ‘আমরা চাচ্ছিলাম এখানকার উইকেটটা স্পিনসহায়ক হোক। আমরা আমাদের ব্যাটসম্যানদের ওপর আমরা আস্থা রাখি। একই সঙ্গে স্পিনারদের ওপরও আস্থা রাখি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের ব্যাটসম্যানরা পারফর্ম করতে পারেনি। আর রান তো আমরা বিদেশের মাটিতেও পেয়েছি। সাকিব দুইশ করেছে, মুশফিক দেড়শ করেছে। তামিমও ধারাবাহিক রান করেছে। এই সময়ের মধ্যে ঘরের মাঠে জিতেছি, শ্রীলংকায়ও জিতেছি। আমার মনে হয় এ ধরনের বাজিগুলো ধরতেই হবে। না হলে এভাবে টেস্ট ক্রিকেট খেলে কোনো লাভ নেই। আমি মরা উইকেটে খেলবো, বা জয়ের জন্য খেলবো, তাহলে মনে হয় আমাদের ক্রিকেট এগোবে না। সাফল্য আসবে, ব্যর্থতাও আসবে। সাফল্য আপনাকে আত্মবিশ্বাস দেবে।’
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com