ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুক্রবার (২০ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আর এ উৎসবকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে পালন করার লক্ষ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৮)।
র্যাব-৮ এর সদর দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপসহ সব পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরসহ আট জেলার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব।
অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি র্যাবও মোবাইল ও স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করবে। পূজাকে কেন্দ্র করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহসহ বাড়ানো হয়েছে র্যাবের তৎপরতা ও নজরদারি। যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়ানোর লক্ষ্যে র্যাব-৮ সার্বিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
পূজামণ্ডপকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তায় প্রতিনিয়ত র্যাবের পেট্রোলিং ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি চলমান থাকবে। এছাড়া বাড়তি নজরদারিসহ প্রস্তুত থাকবে র্যাব স্ট্রাইকিং ফোর্স। এরই পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পূজাকেন্দ্রিক যেকোনো গুজব এড়াতে ও পূজামণ্ডপে নারী দর্শনার্থীদের ইভটিজিং রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পূজাস্থলে নিয়োজিত অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে র্যাবের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। যদি এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তা নিরসনে র্যাব সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোনো ধরনের নাশকতার সম্ভাবনা নেই। অধিকন্তু বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন/চরমপন্থি/স্বার্থান্বেষী মহল যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশের ভাবমূর্তি ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টাসহ যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি প্রতিরোধে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। তারপরও যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে র্যাব তৎপর।
এছাড়া র্যাব-৮ ব্যাটালিয়ন সদরে স্থাপিত কন্ট্রোলরুম থেকে সার্বক্ষণিকভাবে সার্বিক নজরদারি অব্যাহত থাকবে। আর কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশঙ্কা থাকলে র্যাবকে তথ্য দিন, র্যাব তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম।
এদিকে গোটা বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় এবারে প্রায় দুই হাজার মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। যার মধ্যে সব থেকে বেশি বরিশাল ও পিরোজপুর জেলায়। যার মধ্যে বরিশাল জেলা ও সিটি করপোরেশন মিলিয়ে স্থায়ী-অস্থায়ীভাবে সর্বমোট ৬৪৭টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। আর এরপরই পিরোজপুরে প্রায় সাড়ে ৫০০টি মণ্ডপে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপূজার।
এর মধ্যে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠী গ্রামে প্রয়াত জমিদার মোহন লাল সাহার বাড়িতে মহাধুমধামের মধ্য দিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও ভক্তদের পদচারণায় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। সিংহ মূর্তি খচিত জমিদার বাড়ির এ মন্দিরটি প্রায় ১৭২ বছরের পুরোনো ও তৎকালীন ভারতীয় উপ-মহাদেশের সর্ববৃহৎ দুর্গা মন্দির।
জমিদার বাড়ির উত্তরসূরিদের কাছ থেকে জানা গেছে, ১৮৫০ সালে খ্যাতিমান জমিদার মোহন লাল সাহার বাবা জমিদার প্রসন্ন কুমার সাহার উদ্যোগে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কারুকার্য খচিত ঐতিহাসিক এ মন্দিরের ছাদের ওপরের চারপাশের সিংহ মূর্তিগুলো আজও যেন কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার দুর্গা প্রতিমার এ মন্দিরটিতে এখনও আগের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। ৩০ গজ দৈর্ঘ্য, ২০ গজ প্রস্থ মন্দিরটিতে রয়েছে নকশা করা ৪৫টি স্তম্ভ।
অপরদিকে বেদ, মহাভারত, শ্রীমদভগবদগীতা ও পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে ৪০১টি প্রতিমা নিয়ে বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার কবুতরখালীর রাজমন্দিরে। প্রতিবার এখানে ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন করা হয়।