দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো বড় পাওয়া: প্রধানমন্ত্রী

:
: ২ years ago

নিঃস্ব ও অসহায় মানু‌ষের ভাগ‌্য পরিবর্ত‌নে জা‌তির পিতার দেখা‌নো প‌থে হেঁটে ক্ষুধা ও দা‌রিদ্রমুক্ত বাংলা‌দেশ গড়‌তে অভাবনীয় সব পদ‌ক্ষেপ নেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা ব‌লে‌ছেন, দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো হয় তার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) তৃতীয় ধা‌পের প্রথম প‌র্বে ৩২ হাজার ৯০৪‌টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের হাতে বাড়ির মালিকানাসহ দলিল তুলে দি‌তে গি‌য়ে তার বক্ত‌ব্যে এ কথা ব‌লেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ‌্যমে সিরাজগঞ্জ সদর, বরগুনা সদর, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, ফরিদপুরের নগরকান্দায় সংযুক্ত ছি‌লেন তি‌নি। শুনেছেন ঘর পাওয়া উপকারভোগী নিঃস্ব এসব মানুষের অনুভূতি।

ঈদের আগে এই বাড়ি ও জমি পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে তার বিশেষ উপহার জা‌নি‌য়ে প্রধানমন্ত্রী ব‌লেন, বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন কীভাবে নিঃস্ব মানুষদের স্বাবলম্বী করবেন। গ্রামগুলোকে সাজাবেন। একদিকে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, অপরদিকে মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। এই অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশকে তিনি গড়ে ‍তুলেছিলেন।

‘‘স্বাধীনতার পর পর অনেক বিদেশি সাংবাদিক জাতির পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এদেশে তো কিছুই নাই; আপনি কী দিয়ে দেশকে গড়ে তুলবেন। তিনি একটি কথাই বলেছিলেন, ‘আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। আমি এই মাটি-মানুষ দিয়েই বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’ আমার মনে হয়, বিশ্বের কোনো নেতা এত বড় কথা কখনো বলতে পারেন নাই, এত সাহসিকতা দেখাতে পারেন নাই।’’

তি‌নি আক্ষেপ ক‌রে ব‌লেন, আজকে যদি জাতির পিতাকে আমরা না হারাতাম তাহলে বাংলাদেশ ৪০ বছর আগেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে মর্যাদা পেত, সেই বিশ্বাস আমার আছে। কিন্তু সেটা আমাদের ভাগ্যে হয়নি।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে লুটপাট করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর এদেশের মানুষের জন্য আর কেউ এদেশের মানুষের দিকে তাকায়নি। খুনিরা ক্ষমতায় এসেছে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে। আর ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো খুনিদের পুরস্কৃত করতে দূতাবাসে চাকরি দিয়েছে, রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়।

ভূমিহীনদের পুনর্বাসনটা ছিল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে সেটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি কাজ শুরু করেছিলেন।’

২১ বছর পর তার সরকারের প্রথম মেয়াদে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প চালুর মাধ্যমে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা বলেন, ‘২০০১ সালে আমরা সরকারে আসিনি। আটটা বছর সময় নষ্ট হয়। ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আবার আমরা আমাদের এই পদক্ষেপ হাতে নিই। যাতে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবহেলিত মানুষগুলোকে খুঁজে বের করে তাদের পুনর্বাসনের কাজ আমরা করে যাচ্ছি এবং আমি মনে করি আমাদের অর্থাৎ আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীর দায়িত্ব জাতির পিতার এই আদর্শটা মাথায় রেখে কাজ করে যাওয়া। আমরা সারাদেশে একটা সার্ভে করে দেখেছি সেখানে প্রায় ৮ লাখের উপর মানুষ পেয়েছি, যারা ছিন্নমূল। এই মানুষগুলোকে আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দেব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না! পৃথিবীর কোনো দেশে কেউ এরকম উদ্যোগ নিয়েছে কিনা? কিন্তু আমরা জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক। আমি তো শুধু তার কন্যাই না, তার আদর্শ আমি বিশ্বাস করি। আমার কাছে ক্ষমতাটা হচ্ছে জনগণের সেবা দেওয়া, জনগণের জন্য কাজ করা। আর আমি আজ সেটাই করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। সেটাই আমাদের লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই।’

‘সকল মানুষ যা‌তে সুন্দর জীবন পায়, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়‌তে কাজ ক‌রে যা‌বো। বাংলা‌দেশ যাতে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। যে জাতি রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে সেই রক্ত বৃথা যেতে পারে না।’

তি‌নি ব‌লেন, বাংলাদেশ উন্নত হোক স্বাধীনতাবিরোধীরা তা কখনও চাইবে না। তাই সকল বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে।