দুই হাত ছাড়াই বড় অফিসার ফাল্গুনী সাহা !

:
: ৩ years ago

পটুয়াখালী প্রতিনিধি ॥ পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার বাসিন্দা ফাল্গুনী সাহা ২০০২ সালে যখন দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্রী ছিলেন তখন

হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ তারে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে তার দুই হাতের কনুই পর্যন্ত পুড়ে যায়। বাংলাদেশে চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যখন ভর্তি করা হয় তত দিনে তার হাতে পচঁণ ধরে গিয়েছিল। পরবর্তীতে পুরো হাতের পচঁণ ঠেকাতে হাতের কব্জি কেটে ফেলা হয়।

 

তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর ফাল্গুনী থেমে থাকেনি। কাগজ-কলম দেখলে মন খারাপ হতো তার। দুই হাতের কনুইয়ের মাঝখানে কলম রেখে লেখার কৌশল আয়ত্তের চেষ্টা করলেন। তার বাবা জগদীশচন্দ্র সাহার ছোটখাটো একটি মুদি দোকান ছিলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কয়েক দিন পর বাবাকে হারান ফাল্গুনী। তখন ফাল্গুনী সবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করেছেন।

লেখা পড়ার পাশাপাশি মিষ্টির বাক্স বিক্রি করে কোনো মতে সংসার চালাতেন ফাল্গুনী সাহা। শুরুতে কলম ধরে লেখার ক্ষেত্রে এলোমেলো হয়ে যেত লাইন।

কলম ধরতে ধরতে একসময় হাতে ইনফেকশনও হয়েছিল। তবে তিনি হার মানেননি। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে একসময় ঠিকই লেখা আয়ত্তে চলে আসে।

পরের বছর তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হয় তিনি। গলাচিপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিলেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ফাল্গুনী সাহা।

 

ফাল্গুনী সাহা জানিয়েছেন, এইচএসসি ফলাফলের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং এর সময় ফার্মগেটে ছিলেন কিছুদিন।

পরে সূত্রাপুর ও লালবাগে দুই আত্মীয়ের বাসায় থাকতেন। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে।

শুরুতে টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ চলত। টিউশনি চলে যাওয়ার পর চরম অর্থকষ্টে কাটে কিছুদিন।

পরে এলাকার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় ‘মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’এর প্রতিষ্ঠাতা আমেরিকা প্রবাসী চন্দ্র নাথের সঙ্গে।

সেখান থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা হলো। অনার্স শেষ হলো ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগীতায়।

কিন্তু মাস্টার্স শেষে কী হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। এর মধ্যেই গত ১৭ অক্টোবর একটি সুখবর আসে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকে হিউম্যান রিসোর্স অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে।

 

ব্রাক গাজীপুরে কর্মরত এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার কামরুল হোসেন বলেন, ফাল্গুনী সাহা দুই হাত হারিয়ে বসে থাকেনি। তার জীবন গল্পে অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রকাশ পেয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং তার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরির সুযোগ হয়েছে তার।