রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংকগুলোতেও ভর করেছে খেলাপি ঋণ। ৬ বছরে নতুন ৯ ব্যাংকের ৪ হাজার ২৭০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয় গেছে। গত দুই বছরে নতুন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। এর মধ্যে সংকটে থাকা ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণই ৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা।
এসব ঋণের বেশির ভাগই পুরোনো ব্যাংক থেকে আসা। আবার নতুন করে দেওয়া ঋণও খেলাপি হয়ে পড়ছে। অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণেও নতুন ব্যাংকগুলোর কয়েকটি খারাপ করছে। ২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা নতুন ব্যাংকগুলো হলো ফারমার্স, মেঘনা, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, মিডল্যান্ড, ইউনিয়ন, মধুমতি, এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল ও এনআরবি গ্লোবাল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে নতুন ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫৬০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয় ৯৬০ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর পরই আগ্রাসী আচরণ করে। এ সুযোগে পুরোনো ব্যাংক থেকে বেশির ভাগ ঋণ নতুন ব্যাংকে যায়। নতুন করে অর্থায়ন করে নতুন ব্যাংকগুলো, যার প্রভাব এখন পড়তে শুরু করেছে। এর কিছুটা দৃশ্যমান হচ্ছে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির মাধ্যমে। পাশাপাশি ফারমার্স ব্যাংক কোনো ধরনের নিয়মকানুন অনুসরণ ছাড়াই ব্যাংকিং সেবা দেওয়া শুরু করে, যার প্রভাবে পুরো ব্যাংক খাতে সংকট সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেও অনিয়ম হয়। ইউনিয়ন ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ঋণে অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হয়। এর ফলে ছয় বছর হলেও নতুন ব্যাংকগুলোর ভিত্তি মজবুত হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি এ ব্যাংকগুলোর চাহিদা ছিল না। ব্যাংকগুলো যথাযথ ব্যাংকিং করতে পারেনি। পুরো খাতে সংকট তৈরি করেছে ফারমার্স ব্যাংক। এ কারণেই এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। বেসরকারি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের পুরো ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রয়েছে। তাই এসব ব্যাংক তদারকিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ২৭৭ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয় ৩৭৭ কোটি টাকা। আর গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয় ৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক মন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সংকট চরম আকার ধারণ করলে ২০১৭ সালের নভেম্বরে তিনি পদ ছেড়ে দেন।
ব্যাংকটির দুরবস্থা পুরো খাতে সংকট তৈরি করলে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো উদ্ধারে এগিয়ে আসে। ব্যাংকটির শেয়ার কিনে এখন পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত হয়েছে সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। যথাযথ হিসাব-নিকাশ করায় বের হয়ে আসছে ব্যাংকটির প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির অবস্থা।
ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকটির প্রকৃত হিসাবায়ন করা হচ্ছে। তাই খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বেরোচ্ছে।
এদিকে মেঘনা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ৫৬ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ২৩৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সাংসদ এইচ এন আশিকুর রহমান।
সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল দুই কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৮৭ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকের পরিচালকদের মধ্য অভ্যন্তরীণ দণ্ড রয়েছে।
মিডল্যান্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ২৭ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৬৭ কোটি টাকা। মধুমতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ৬ কোটি টাকা, গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ১০২ কোটি টাকা।
এদিকে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ৩ কোটি টাকা, গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে যাত্রা করা ব্যাংকগুলো মধ্যে একমাত্র এ ব্যাংকের ঋণের স্থিতি ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও এস আলম গ্রুপ।
এনআরবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয়েছে ১৫৭ কোটি টাকা, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ১১৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া অনিয়মের কারণে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসায় ব্যাংকটি এখন ভালো করছে বলে জানা গেছে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com