দাকোপের নোনাভূমিতে মিষ্টি তরমুজের বাম্পার ফলন

:
: ৪ years ago
Exif_JPEG_420

দীপক রায়, দাকোপ(খুলনা) : খুলনা জেলাধীন দাকোপ ঊপজেলার
নোনাভূমিতে এখন মিষ্টি তরমুজের বাম্পার ফলন। করোনা ঝুঁকি
মাথায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটেছে বেপারিদের ট্রাক ও
ট্রলার।

প্রতিবছরের মত এবারও দাকোপের বাজুয়া এলাকার তরমুজ ক্রয় করার
ঊদ্দেশ্যে,দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ফড়িয়া এবং বেপারিরা ট্রাক ও
ট্রলার নিয়ে দাকোপের বাজুয়া অঞ্চলে আসতে শুরু করেছে। করোনার
কারণে ঊপজেলা প্রশাসন প্রথমে বাইরের লোকজন এলাকায় ঢুকতে বাধা
দিলেও, তরমুজ চাষিদের লোকসানের কথা বিবেচনা করে পরে প্রবেশের
অনুমোদন দিয়েছেন।

সূত্রে জানাযায়, দাকোপে পূর্বে কোনোদিন তরমুজের চাষ
হয়নি।১৯০১ সালে দাকোপে আবাদ হয়ে জনবসতি শুরু হওয়ার পর থেকে
এক ফসল হিসেবে এ অঞ্চলে শুধু আমন ধানের চাষ হতো। ১৯৮৮ সালের ২৯
নভেম্বর ঘটে যাওয়া প্রবল ঘূর্নীঝড় দেশে বন্যা সৃষ্টি করে ,এ এলাকার
আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং অধিকাংশ কৃষক আমন ধান ঘরে
তুলতে না পেরে চরম অসহায় হয়ে পড়ে। তখন সহযোগীতার হাত বাড়ায়
দাকোপের কৃষি অফিস। কৃষকদের রবি ফসল লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা
হয়। তখন বাজুয়ার কচা এলাকার রবিন কয়াল এবং পংকজ কয়াল সর্বপ্রথম
পরক্ষিামূলকভাবে দুই কৌটা তরমুজের বীজ কৃষি অফিস থেকে নিয়ে
মাঠে লাগায় এবং কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যা করতে
থাকে। বীজ রোপনের তিনমাস পর ক্ষেতের বড় বড় তরমুজ এবং তরমুজের
স্বাদে অবাক হয়ে যান দুই তরমুজ চাষি। তাদের তরমুজ দেখতে ক্ষেতের
পাশে ভীড় জমায় এলাকার শত শত চাষি। তারপর প্রতিবছর একটু একটু
করে চাষ বাড়তে বাড়তে বর্তমান অবস্থায় এসে পৌছিয়েছে।
সাধারণত; মাঘমাসে আমন ধান কাটার পর জমি পরিস্কার করা শুরু হয়
তরমুজের চাষ করার জন্য। চাষ করে জমি শুকানো হয় এবং ফাল্গুন মাসের
প্রথম সপ্তাহ থেকে তরমুজ লাগানো শুরু হয়। নিয়মিত পরিচর্যার পর ফল
বড় হয়ে গেলে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ থেকে জৈষ্ঠ্য মাসের প্রায় ১৫ তারিখ
পর্যন্ত তরমুজ সংগ্রহ করা হয়।

সরেজমিনে দাকোপের বাজুয়া এলাকার
দাকোপ,লাউডোব,কৈলাশগঞ্জ,বাজুয়া এবং বানীশান্তা ইউনিয়ন ঘুরে
দেখাযায়, মাঠে মাঠে তরমুজের ফড়িয়া এবং বেপারিরা ঘুরে ঘুরে
তরমুজ ক্রয় করছে। শত শত ট্রাক রাস্তা দিয়ে জমিতে ঢুকে তরমুজ
সংগ্রহ করে আবার মোকামে চলে যাচ্ছে। দাকোপের
পোদ্দারগঞ্জ,বাজুয়া, বানীশান্তা,লাউডোব এবং রামনগর ঠাকুরবাড়ি
খেয়াঘাট দিয়ে ট্রলারে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ বহন করে
নিয়ে যাচ্ছে। চালনার পোদ্দারগঞ্জ ফেরিঘাটে দাকোপের পারে সবসময়
সারিসারি ট্রাকের ভীড় পারের অপেক্ষায়।

কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের তরমুজ চাষি অজয় মৃধা, সুশীল মন্ডল,নিতাই রায়
জানান এবার তরমুজ লাগাতে প্রতিবিঘা জমির জন্য ব্যায় হয়েছে
১০থেকে১২ হাজার টাকা। এ অঞ্চলে বিগ
ফেমিলি,পাকিজা,হানিকুইন,আস্তা জাতসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ
লাগানো হয়। এ বছর একবিঘা জমির তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৮০
হাজার টাকায়।

বাজুয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক এবং কৃষক
বিদেশ রায় অভিযোগের সুরে জানান, তরমুজ এ এলাকার কৃষকদের ভাগ্য
বদলে দিয়েছে কিন্তু এ ফসলের উন্নয়নে জনপ্রতিনিধি এবং উপজেলা
প্রশাসনের তেমন কোনো নজর নেই। তিনি বলেন, দাকোপের ভূগর্ভস্থ
পানিতে লবনের পরিমান বেশী, সে পানি ফসলের কাজে লাগানো যায় না।
পুকুর, খাল এবং নদীর মিষ্টি পানি সেচ দিয়ে তরমুজ উৎপাদন করতে হয়।
মাঠের মধ্যে খালগুলো দীর্ঘদিন খনন না করায় সেগুলি বিলিন হয়েছে।
অধিকাংশ নদী খনন দায়সারাভাবে হওয়ায় সময়মত নদীতে পানি থাকে না।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের টাকায় খাল খননের নামে স্কেবিটর দিয়ে শুধু
দু’পারের বৃক্ষনিধন করা হয়েছে এবং দু’পার চাচা হয়েছে মাটি কাটা
হয়নি। অনেক নদী খাল আবার ইজারা দেওয়া হয়েছে। এসব নদী খাল মুক্ত
করা দরকার।তরমুজ চাষের জন্য মিষ্টি পানির বড়ই অভাব। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট
দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তিনি।

বরিশালের সলেমান ও কুদ্দুস বেপারি বলেন, দাকোপের তরমুজ খুব মিষ্টি,
বাজারে এর চাহিদাও বেশী তাই প্রতিবার তরমুজ কিনতে দাকোপে
আসি। এবার করোনার কারণে আসতে ভিষন বেগ পেতে হয়েছে তারপরও
এসেছি। তরমুজ ভালো হয়েছে দাম ও ভালো দিচ্ছি তবে পথে চাঁদা
দিতে দিতে অনেক টাকা ব্যায়ও হয়েছে। তারপরও লাভ হবে বলে আশা করছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার মেহেদি হাসান খান বলেন,গতবার তরমুজের
চাষ হয়েছিল ৭শ হেক্টর জমিতে, এবার সেখানে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৬শত
৩৫ হেক্টর জমিতে। গতবার অতিবৃষ্টির কারণে অর্ধেক ফসল নষ্ট হয়েছিল
তারপরও প্রায় ৪৫ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছিল। এবার ৭০
কোটি টাকা ছাড়াতে পারে আশা করছি।তিনি আরও জানান এবার
বাজুয়ার ৫টি ইউনিয়ন ছাড়াও কামারখোলা, তিলডাঙা,সুতারখালী ও
পানখালিতেও কিছু কিছু জায়গায় তরমুজের চাষ হয়েছে এবং
সেখানে ফসল ভালো হয়েছে।আগামীতে আরও বেশী জমিতে তরমুজের চাষ
হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
স্থানীয়রা জানান সব তরমুজ বিক্রি হতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগতে
পারে।