দশ উইকেটের শোচনীয় পরাজয় বাংলাদেশের

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

৪৩তম ওভারের বল করার জন্য আসলেন অধিনায়ক মাশরাফি। ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক। স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে উঁচু করে শর্ট খেললেন ডি কক। লং অনে ক্যাচ উঠে গেলো। সেখানে দাঁড়িয়ে অন্যতম সেরা ফিল্ডার (!) নাসির হোসেন। তার হাতে বল ঠিকই জমা পড়লো। কিন্তু তালুবন্দী করে রাখতে পারলেন না। বল পড়ে গেলো হাত থেকে।

পুরো ম্যাচের অবস্থাই এই ছোট্ট চিত্রটা দিয়ে কল্পনা করে নিন। একের পর এক মিস ফিল্ডিং, ক্যাচ মিস। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা স্বচ্ছন্দে খেলবেন- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বোলারদের সব চেষ্টা যখন ফিল্ডারদের কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়, তখন সেটাকে নখদন্তহীন, নির্বিষ অনেক কিছু দিয়েই আখ্যা দেয়া যায়। এবং দিন শেষে ফল, ২৭৯ রানের লক্ষ্য দিয়েও বাংলাদেশ ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত।

টেস্ট সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হওয়ার পর, ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও বড় ব্যবধানেই হারতে হয়েছে মাশরাফি বাহিনীকে। দুই প্রোটিয়া ওপেনারের রেকর্ড পার্টনারশিপে ১০ উইকেটের পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশকে।

নানাভাবে চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের বোলাররা দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপে একটুও আঁছড় ফেলতে পারেননি। একটি উইকেটও ঝুলিতে পুরে নিতে পারেননি। উল্টো বাংলাদেশের বিপক্ষে উদ্বধোনী জুটিতে ২৮২ রান করে, আগের ১৫৮ রানের রেকর্ড ভাঙ্গেন আমলা- ডি কক। দু’জনেই পেয়েছেন সেঞ্চুরির স্বাদ। হাশিম আমলা করেছেন ১১০, আর ডি কক করেন ১৬৮ রান।

দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার ডি কক এবং হাশিম আমলার সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সাতজন বোলার এনেছিলেন বোলিংয়ে, তবুও কোন উইকেটের দেখা পাননি। উল্টো টাইগার বোলারদের দুন্ধুমার মার মেরেছেন আমলা-ডি কক।

১১২ বল মোকাবেলা করেন হাশিম আমলা। ৮টি বাউন্ডারি মেরে রান করেছেন ১১০। ডি কক মোকাবেলা করেন ১৪৫ বল। ২১টি বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি। সঙ্গে ছক্কা মেরেছেন ২টি। চার পেসারের (মাশরাফি, রুবেল, তাসকিন এবং সাইফউদ্দিন) সঙ্গে তিন স্পিনার (সাকিব, মাহমুদউল্লাহ এবং নাসির) ব্যবহার করেও কোনো উইকেটের দেখা পেল না বাংলাদেশ।

এর আগে কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালে নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ভেঙেছিল বাংলাদেশ। এই মাঠে আগে দুই ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৯৮। এবার সব ছাড়িয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭৮ রান করে বাংলাদেশ।

টেস্ট সিরিজে একের পর এক সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন মুশফিকুর রহীম। ভুল সিদ্ধান্ত, ম্যানেজমেন্ট এবং দল নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যের জের ধরে নেতৃত্ব হারানোর পর্যায়ে পর্যন্ত চলে এসেছিলেন তিনি। তবে মাঠের বাইরের আলোচনা-সমালোচনা বাইরে কিভাবে রাখতে হয় সেটা খুব ভালোভাবেই দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরি করলেন মুশফিক। খেললেন হার না মানা ১১০ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ১১৬ বলে খেলা ইনিংসটি তিনি সাজালেন ১১টি বাউন্ডারি এবং ২টি ছক্কায়।

এছাড়া ইমরুল কায়েসের ৩১, সাকিবের ২৯, লিটনের ২১, মাহমুদউল্লাহর ২৬ রানের ইনিংসগুলো বাংলাদেশকে মোটামুটি একটা সম্মানজনক স্কোর গড়তে সহায়তা করে।