দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করবো-সাদিক আবদুল্লাহ

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেছেন, বরিশালবাসী তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। নগরের প্রত্যেকটি পরিবার এখন তার পরিবার, তিনি সব নাগরিকের প্রতিনিধি। দলমত নির্বিশেষে তিনি সবার হয়ে কাজ করবেন। নগর ভবনে সবাই সমান সেবা পাবেন।

বিএনপির দুর্গে দীর্ঘ প্রায় ৩৪ বছর পর ২০০৮ সালের সিটি নির্বাচনে বরিশালে জয় পেয়েছিলেন তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন। পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে আবার নগর ভবনের প্রধান চেয়ারটি চলে যায় বিএনপির দখলে। সোমবারের ভোটে ফের নগরপিতা হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।

২০১৬ সালে বরিশাল মহানগর কমিটিতে পদ পান সাদিক আবদুল্লাহ। মূলত তখন থেকেই তিনি মেয়র পদে প্রার্থিতার প্রস্তুতি শুরু করেন। এর আগেই নগর রাজনীতিতে গড়ে তোলেন শক্ত অবস্থান। বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সেরনিয়াবাত পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের এই প্রতিনিধি স্থানীয় রাজনীতিতে ‘যুবরত্ন’ হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনের মাঠে ‘নতুন মুখ’ হলেও গত কয়েক বছরে দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ঝলক দেখিয়ে সাদিক আবদুল্লাহ ছিলেন বরিশাল নগরীর সবচেয়ে বেশি আলোচনায়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতসহ ‘৭৫-এর ১৫ আগস্টের সব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, বিজয়ের সব কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গোটা দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে উন্নয়ন হয়েছে, সে উন্নয়নে আস্থা রেখে বরিশাল নগরবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করেছে। নগরবাসীর এ রায়কে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে তিনি নগরীর উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন বলেও অঙ্গীকার করেন। নবনির্বাচিত এ মেয়র বলেন, সাবেক মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরন বরিশাল নগরীতে যে উন্নয়ন করেছেন তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পরিকল্পিত উন্নয়ন করা হবে। এ ব্যাপারে তিনি নগরীর অভিজ্ঞ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ করবেন অকাতরে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর কালীবাড়ি সড়কের বাসভবনে বসে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ২০১৩ সালে শওকত হোসেন হিরনকে ভোট না দিয়ে গত পাঁচ বছর নগরবাসী যে দুর্ভোগ পেয়েছেন সে জন্য এখন তারা দুঃখ প্রকাশ করছেন। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নগরবাসীর মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান করা। বিশেষ করে পানি সংকট ও জলাবদ্ধতা দূর করা। নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ নিয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে টেকসই উন্নয়ন করতে চাই।

নগর ভবনের নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, আমি সোজা ও সৎ পথে চলি। নিজে কখনও দুর্নীতি করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আমার আহ্বান, তারাও যেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করেন। অতীতে কাউন্সিলররা করপোরেশনের উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি করতেন, সে সুযোগ কাউন্সিলররা পাবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় কাউন্সিলরদের প্রতিও আমার অনুরোধ থাকবে কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যাতে নবনির্বাচিত নগরপরিষদ জড়িত না হয়। এ প্রসঙ্গে সাদিক বলেন, বিজয়ী অভিজ্ঞ এবং পুরনো কাউন্সিলরদের পরামর্শ নিয়ে এবং তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নগর ভবনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাই। করপোরেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনি যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা ষোলোআনা অনুসরণ করা হবে। এর বাইরে কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না। কেউ বাড়তি কোনো সুযোগও পাবে না।

দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোলার গ্যাস বরিশালে সরবরাহের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী বরিশালের জনসভায় ভোলার গ্যাস বরিশালে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ওই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বরিশালে গ্যাস আনার জন্য পাইপলাইনের কাজও শুরু হয়েছে। বরিশালে যাতে অল্প সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং আবাসিক খাতে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হয় সে জন্য সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন দপ্তরগুলোতে তিনি যোগাযোগ করবেন।

সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়- এ কথা ভোটারদের বলে নির্বাচনের প্রধান প্রতিপক্ষ সরোয়ার কাকু নগরীতে হৈচৈ তুলেছিলেন। ওই প্রচারণায় নগরবাসীর সহমর্মিতা তার প্রতি আরও বেড়েছে; পাশাপাশি প্রত্যাশাও বেড়েছে বহুগুণ। নগরবাসী মনে করেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় বিধায় তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বেশি পূরণ করতে পারব। সাদিক আবদুল্লাহ তার বাবার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী রাজনীতির অভিভাবক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পরামর্শ ও নির্দেশনা নিয়ে বরিশাল বিভাগীয় শহরকে তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ ডিজিটাল নগরীতে পরিণত করা হবে। দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে সর্বদা এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশার প্রতি আকাত্ম থাকব এবং যে কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরিক হবো।

নাগরিক সুবিধা না পেয়েও নগরের বর্ধিত এলাকার বাসিন্দারা অসহনীয় করের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে কী উদ্যোগ নেবেন জানতে চাইলে নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, মাঠ পর্যায়ে জরিপ না করে বর্তমান মেয়র নগরীতে বিভিন্ন ধরনের কর ৩০ থেকে ৫০ গুণ বৃদ্ধি করেছেন। স্থান ও অবস্থান ভেদে ওই কর যথাযথভাবে নির্ধারণ হয়নি। মাঠ পর্যায়ে জরিপ করিয়ে কর ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস করা হবে। সাদিক বলেন, নতুন কোনো কর আরোপ করব না। নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত নগরবাসীকে বাড়তি করের বোঝা থেকে মুক্ত করা হবে। যারা পানি পান না, তারা কেন পানির ট্যাক্স দেবেন। করপোরেশন নগরবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে না।

প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশাল নগরীর খাল ও পুকুর রক্ষায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, বরিশাল নগরের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা করব। নগরের খালগুলো ভরাট এবং দখলের সঙ্গে অনেক রাঘববোয়াল জড়িত। মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করে খালগুলো দখলমুক্ত করা হবে। জলাধার রক্ষার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর নগরী গড়তে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল গড়িয়ার পাড়ে স্থানান্তর করা হবে। নগরীতে দিন দিন জনবসতি বাড়ছে জানিয়ে সাদিক বলেন, বর্ধিত জনসংখ্যার বিষয়টি পরিকল্পনায় রেখে সব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে, যাতে নগরীর প্রকৃত চরিত্র বজায় থাকে। যত্রতত্র দালানকোঠা তৈরি করতে দেওয়া হবে না। নগরীর পূর্বাংশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলা নদীর তীর যতটুকু সিটির আওতায় পড়েছে তার ওপর ‘মেরিন ড্রাইভের’ আদলে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে নগরবাসীর সহায়-সম্পদ রক্ষা এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে।

সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল নগরীর কলোনিগুলোর (বস্তি) বাসিন্দাদের উন্নত জীবনযাপন নিশ্চিত করতে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, বরিশাল নগরীর উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য ‘নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ নেই। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলে যোগাযোগ করব বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য, যাতে সব ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পিত ও টেকসইভাবে করা সম্ভব হয়। সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তাকে ভোট দিয়ে নগরবাসীর সেবা করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বরিশাল নগরের সর্বস্তরের বাসিন্দার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি নগরবাসীর এ রায়কে সর্বদা মর্যাদার আসনে রাখব।