পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.)জাহিদ ফারুক শামীম বলেছেন,প্রতিবছর এসময়টাতে বন্যা হয়। গতবছরও পাঁচবার বন্যা হলে পরেও যেভাবে ক্ষতি হওয়ার কথা ছিলো সেই ধরনের ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি হয়নি যে তার কারণ হলো, ৬৪ জেলায় আমাদের একটি খাল খনন প্রকল্পের আওতায় আমরা ৫১১ টি ছোট নদী ও খাল করছি। যার কাজের প্রক্রিয়া ৫৭ শতাংশ অগ্রসর হয়েছে,বিভিন্ন নদী ও খালে অবৈধ স্থাপনা থাকায় সেগুলো দুর করতে সময় লাগার কারণে আমরা আরো অগ্রসর হতে পারিনি। তবে আমরা এ বছরে প্রকল্পটি শেষ করবো।
তিনি বলেন, বর্ষাকালে উজান থেকে আমাদের দেশে ১২২৪ বিলিয়ন কিউবিকমিটার পানি আসে। খনন করার কারনে আমাদের খাল ও নদীতে পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এজন্য অতীতের ন্যায় গতবছর প্লাবিত হয়নি, তবে ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ, এদেশে বন্যা আজীবন হয়ে আসছে। আমাদের দাদারা দেখে আসছে, আমরা দেখে আসছি, আমাদের যারা উত্তরসূরী তারাও দেখবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যাতে করে টেকসই বাধের পাশাপাশি বর্ষার সময় যে বিপুল পরিমান পানি নেমে আসে তা যেন নদী-খালগুলো ধারণ করতে পারে। আর গ্রামকে প্লাবিত না করতে পারে সেজন্য আমাদের প্রকল্প নেয়া আছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে আমাদের বড় বড় নদী, অর্থাৎ যেগুলোর প্রস্থ ৯-১৫/১৬ কিলোমিটার সেগুলোকে আমরা ছোট করে ৫-৭ কিলোমিটারের মধ্যে নিয়ে এসে মেইনটেনেন্স ড্রেজিং এর মাধ্যমে ম্যানেজ করবো। আর ড্রেজিং এর মাটি দিয়ে জমি রিক্লেম করবো। এতে আমাদের যে জমি হবে তাতে বনায়নসহ ইন্ডাষ্ট্রিয়াল প্লট করতে পারবো।
তিনি বলেন,নগর বন্যাটা অর্থাৎ শহরে যেটিা হয় সেটা সিটি করপোরেশন দেখে। বিশেষ করে ঢাকারটা উত্তর-দক্ষিন সিটি করপোরেশন দেখে। ড্রেনেজ সিস্টেমে আমাদের ঢাকা-ডেমরা, নারায়নগঞ্জে ডিএনডি প্রকল্প আছে এবং মিরপুরে আমাদের আরেকটা পন্ডিং এরিয়া আছে। ঢাকা শহরের পানিগুলো ড্রেনেজ সিস্টেমের মাধ্যমে পন্ডিং এরিয়াতে চলে আসলে,সেখান থেকে পানিগুলো পাম্পআউট করে তুরাগ নদীতে ফেলে দিবো। কিন্তু ঢাকা শহর থেকে পানিগুলো আমাদের জায়গাগুলোতে আসার ব্যবস্থা সিটি করপোরেশনকে করতে হবে এবং তারা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে ঢাকা শহরে যে জলাবদ্ধতা হচ্ছে সেটার সাথে পানিসম্পদ মন্ত্রনালয় সেভাবে জড়িত নয়, তবে ওই কমিটির সাথে আমরা আছি।দীর্ঘ আলোচনা হচ্ছে, ড্রেনেজ সিস্টেমকে উন্নত করার জন্য। বিশেষজ্ঞ ও সিটি মেয়ররা কাজ করে যাচ্ছে ড্রেনেজ সিস্টেমকে উন্নত করা জন্য।কারন পানি আমাদের পন্ডিং এলাকা পর্যন্ত আসলে আমরা পাম্পআউট করে সেগুলোকে বের করে দিবো।
জাহিদ ফারুক-এমপি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পরের বছরই চেষ্টা করেছিলাম, বন্যা আসার আগেই ওই বছরের বাজেটে আমরা কিছু টাকা রাখবো মেরামতের জন্য। যাতে করে আমাদের প্রটেকটিভ প্রটেকশন ওয়াল রয়েছে, সেগুলো যাতে আমরা মেরামত করতে পারি এবং আরো টেকসই হয়। দুর্ভাগ্যবসত ওইবছর থেকেই করোনা শুরু হয়ে গেলে আমরা এটা করতে পারিনি।তবে পরিকল্পনাটি আমাদের এখনো রয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু দেখি আমাদের দেশে নতুন নতুন বিল্ডিং হয়, কিন্তু সেটা মেইনটেনেন্সের বেলায় খুব অনীহা প্রকাশ করি আমরা। আমি খুবই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করি প্রটেকটিভ প্রটেকশন ওয়ালগুলোকে মেইনটেনেন্স করতে, যা করলে আরো টেকসই হবে। সেটা আমরা করোনার জন্য করতে পারিনি, তবে করোনা থেকে গেলে আগামীবছর মেইনটেনেন্সের জন্য যে পরিকল্পনা করেছি, সেটা বাস্তবায়ন করবো।
তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে ৩২৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প আছে। সেখানে ১০ টি পোল্ডার বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আমরা চেষ্টাকরছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আরো ২০ টি পোল্ডারের কাজ পাওয়ার চেষ্টা করছি। যে বিষয়ে আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আমাদের মোট ১৩৯ টি পোল্ডার আছে,আর ১০ টাসহ আরো ২০ টি পোল্ডার করতে পারলে দক্ষিনাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকা নিরাপদ থাকবে। এছাড়া সরকারের জিওবি’র টাকা দিয়ে আমরা চট্টগ্রাম এলাকায় বেশ কয়েকটি পোল্ডারের কাজ করছি।বরগুনার বামনা, বেতাগী এবং আমতলী এলাকাতে তিনটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। একনেক থেকে পাশ হলেই আমরা কাজ শুরু হবে।আম্ফান শুরু হওয়ার আগেই আমি সাতক্ষীরাতে গিয়েছিলাম এবং সেখানে বাধের খুব নাজুক অবস্থা দেখে আমি তাৎক্ষনিক প্রকল্প নেয়ার নির্দেশনা দেই। তবে কাজের মান ও স্বচ্ছতা ঠিক রাখার কিছু নির্দেশনার কারনে আমাদের প্রকল্পগুলো কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে। যেখানে আগে আমরা ৬ মাসের মধ্যে প্রকল্প একনেকে ওঠাতে পারতাম,সেটা ওঠাতে এখন এক থেকে দেড়বছর সময় লাগছে। সাতক্ষীরার ১৪/১, ১৫ পোল্ডারের প্রকল্প এখনো একনেকে ওঠাতে পারেনি। আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সময় লাগে। লোকজন মনে করে একজন মন্ত্রী আজ তাদের এলাকায় গেলো কাল থেকে কাজ শুরু হবে কিন্তু পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের কাজ সেভাবে করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আগের থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের কাজের পরিধি যেমন অনেক বেড়েছে, তেমনি অনেক গতিশীলও হয়েছে। গ্রামে যেখানে বাধের কাজ করা হবে, সেখানে নির্দেশনা আছে জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ ওই এলাকার লোকদের নিয়ে কমিটি করার। তারা কাজটি পর্যবেক্ষন করে রিপোর্ট দিবে, যার ওপর আমরা কাজটি সঠিক হয়েছে কিনা তার যাচাই-বাছাই করবো। এই কমিটির বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা রয়েছে , যে নির্বাহী প্রকৌশলী এটা মানবে না তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
হাওরের বিষয়ে তিনি বলেন, আসামে বৃষ্টি হলে আমাদের হাওর এলাকায় প্রতিবারই ফ্লাশফ্লাড হয়, আমাদের ফসল নষ্ট করে। এজন্য আমরা ১৩ টি নদী নিয়ে একটি প্রকল্প করেছি। এ নদীগুলো ড্রেজিং করলে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়বে, ফ্লাশফ্লাডের পানিগুলো সেখান দিয়ে যাবে এবং ফসল নষ্ট হবে না। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পরে গত তিনবছরে আল্লাহ রহমতে ওইভাবে ফ্লাশফ্লাড হয়নি, আমরা ফসল ঘরে আনতে পেরেছি।এবারের বর্ষার পরপরই আমরা ওই ১৩ টি নদীতে খাল খনন শুরু করবো। যাতে আগামী বছরের ভেতরে একটা পর্যায়ে পৌছাতে পারি এবং ফ্লাশফ্লাড থেকে আমরা বাঁচতে পারি। সুনামঞ্জবাসী যাতে ফ্লাশফ্লাডে আক্রান্ত না হয়।
তিনি বলেন,আমাদের দেশটা একটি ছোট দেশ, কিন্তু বিপুল জনসংখ্যা রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষ নদীতীরের প্লেইন এলাকাতেই বসবাস করে, কিন্তু সেখানে জনগনের বসবাস করার কথা নয়।
আমরা কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু একইসাথে জনগনের সহযোগীতা দরকার বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা নদী ড্রেজিং করি একটি হিসেবের ওপর। কিন্তু অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলে কিন্তু আমাদের বাধগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয় ভেঙ্গে যায়। যা রোধে জেলা প্রশাসনকে চিঠিও দিয়েছি। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষে এতো বিস্তৃত নদী এলাকা তাদের নজরদারীতে আনা সম্ভব নয়। এজন্য জনসাধারনের সহযোগীতার প্রয়োজন আছে, তাদের বোঝা উচিত যে তাদের এলাকায় নদী ভাঙ্গন হলে ঘরবাড়ি প্লাবিত হবে।