দক্ষিণাঞ্চল মানুষের জীবনধারা পরিবর্তন করবে পদ্মা সেতু

:
: ৪ years ago

দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষদের রাজধানী পাড়ি দিতে হলে পদ্মা নদী পার হয়ে আসতে হয়। সেতু না থাকার ফলে এসব অঞ্চলের মানুষদের ফেরি পারাপারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা, ভোগান্তি মাড়িয়ে আসতে হয় রাজধানীতে। শুধু মানুষের যাতায়াতের নয় পণ্য পরিবহনে ভোগান্তির সীমা নেই এই অঞ্চলের মানুষের। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের দুঃখ ঘুচবে সেই সাথে পাল্টে যাবে তাদের জীবন।

পদ্মা সেতুতে ৪১টি স্প্যান এরিমধ্যে বসে গেছে। আগামী এক বছরের মধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ একই সাথে সড়কপথ এবং রেললাইনের সুবিধায় যুক্ত হওয়ার জন্য আশায় নিজেদের বুক বেঁধেছেন। সেতুকে ঘিরে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের আনন্দের সীমা নেই।

 

শুধু পদ্মা সেতুই নয়; এই সেতুর সাথে যুক্ত হয়েছে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ননস্টপ এক্সপ্রেসওয়ে। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে দুটি সার্ভিস লেনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করছে। মাওয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এবং পানছার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি এক্সপ্রেসওয়ে পুরো খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের একটি অংশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ছয় জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষ সরাসরি এই এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উপকৃত হবেন।

আধুনিক মহাসড়কের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রেখে তৈরি করা হয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে। পদ্মা সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেলে ভাঙ্গা থেকে ঢাকা আসা-যাওয়ায় এক ঘণ্টাও লাগবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। এই সেতু চালু হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেড় শতাংশ বেড়ে যাবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে।

তাছাড়া, সড়ক ও রেলপথ বিশিষ্ট এই পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করার পাশাপাশি। এতে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে। বিনিয়োগ বাড়বে। কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য সরাসরি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠাতে পারবেন। এতে পণ্যের ভালো দাম পাওয়া যাবে। এই সেতুর ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার হবে। বিশেষ করে ভারতের বাণিজ্য বাড়াতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করা যাবে।

 

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ রেললাইনের সুবিধা পাবেন। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ও দ্বিতীয় ধাপে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন রেলপথ নির্মাণ কাজ চলমান আছে। তাছাড়া এই রেল লাইন ধরে বরিশালসহ পায়রা বন্দরও রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে।

তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, পদ্মা সেতুকে কেবলে ট্রান্সপোর্ট করিডোর হিসেবেই চিন্তা করলে হবে না। এটাকে একটা অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবেও চিন্তা করতে হবে।এটা করতে গেলে দক্ষিণ অঞ্চলে গড়ে তুলতে হবে শিল্পায়ন, স্পেশাল ইকোনমিক জোন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক।স্থানীয় যে জনগণ আছে তাদেরকে এসব কর্মকাণ্ডে যুক্ত করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ এর সাথে সাথে অন্যান্য সমান্তরাল পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে। তাহলে এই সেতুতে দেশের যে বিশাল বিনিয়োগ বিশাল হলো। সেটা আমারা তুলে আনতে পারবো।

সর্বোপরি পদ্মা বহুমুখী সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে দেবে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে এই সেতু আসলেই দেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু হয়ে বাস্তবে ধরা দিয়েছে।