দক্ষিণাঞ্চলে করেনা সংক্রমন ক্রমশ আতংক সৃষ্টি করছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দ্বিতীয় দিনের মত ‘বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় রোগীর সংখ্যা অত্যাধীক এবং বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বার্তা দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য বিভাগের অপর এক বর্তায় বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকা লক ডাউন করারও সুপারিশ করা হয়েছিল । কিন্তু প্রতিদিন নগরী যুড়ে নতুন নতুন মানুষ করেনা সংক্রমনে আক্রান্ত হলেও কারো কোন হেলদোল নেই।
গোটা নগরী যুড়ে এখন করোনা সংক্রমনের অতংকিত খবর। চিকিৎসক, ব্যাংকার, সরকারী কর্মকর্তা-কর্র্মচারী সহ আইনশৃংখলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য ইতোমধ্যে করেনা সংক্রমিত হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি উত্তরন দুরের কথা, তা প্রতিরোধেও নুন্যতম কোন পদক্ষেপ নেই।
শুক্রবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ৮৪ জন আক্রান্ত ও দু জনের মৃত্যুর কথা বলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় অক্রান্তের সংখ্যাই ৫১। মৃত্যু হয়েছে একজনের। জেলায় আক্রান্ত ৫১ জনের মধ্যে মহানগরীতেই সংখ্যাটা প্রায় ৪০। অবশ্য মহানগরীতে যে একজনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে, সেই ডাঃ আনোয়ার হেসেন গত সোমবার দুপুরে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নেয়ার পরে মঙ্গলবার রাতে সেখানের একটি হাসপাতালে মারা যান।
তবে শুধু দক্ষিণাঞ্চলই নয় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের অবস্থাই ক্রমশ অবনতি লাভ করছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩শ ছুই ছুই করছে। যার মধ্যে বরিশাল জেলাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৮১০। আর মহানগরীতে ৭শ অতিক্রম করেছে। শুক্রবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় পটুয়াখালীতে নতুন করে ১২জন আক্রান্ত সহ ১জনের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা সোয়াশতে পৌছল। মির্জাগঞ্জ উপজেলার কাকরাবুনিয়াতে ৬৫ বছর বয়সি একব্যক্তির মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে জেলাটিতে করেনা সংক্রমনে ৭ জনের মৃত্যু হল।
গত ২৪ ঘন্টায় তৃতীয় সর্বাধীক আক্রান্ত হয়েছে দ্বীপ জেলা ভোলাতে। সেখানে নতুন ১০ জন সংক্রমিত হবার মধ্যে দিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৮৬। মোট মৃত্যু হয়েছে দু জনের। এসময় পিরোজপুরে আরো ৫জন আক্রান্ত হবার মধ্যে দিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯৯ জনে উন্নীত হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। নুতন করে ৩জন আক্রান্ত হবার মধ্যে দিয়ে ছোট জেলা বরগুনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১শতে উন্নীত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে দুজনের। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট জেলা ঝালকাঠীতে গত ২৪ ঘন্টায় আরো ৩জন আক্রান্ত হবার মধ্যে দিয়ে মোট সংখ্যাটি ৭৮-এ উন্নীত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত ৩জনের।
তবে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আরো ২০ জন সুস্থ হবার ফলে দক্ষিণাঞ্চলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৩৫৬ জনে উন্নীত হলেও এ অঞ্চলে এখনো মৃত্যু হার জাতীয় পর্যায়ের কয়েকগুন বেশী। বরিশাল মহানগরী সহ জেলায় মোট আক্রান্ত ৮১০ জনের বিপরিতে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১২৭ জন। পটুয়াখালীতে ১২৫ জন আক্রান্তের বিপরিতে মারা গেছেন ৭জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩১ জন। বরগুনায় ১শ জন আক্রান্ত হলেও মারা গেছেন ২জন। সুস্থ হয়েছেন ৪৭ জন। পিরোজপুরে ৯৯ জন আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের । সুস্থ হয়েছেন ৬২জন। ভোলাতে ৮৬ জন আক্রান্ত হলেও মারা গেছেন দুজন। সুস্থ হয়েছেন ৩১ জন। আর ছোট জেলা ঝালাঠীতে ৭৮ জন আক্রান্তের বিপরিতে মারা গেছেন ৩জন। সুস্থ হয়েছেন ৪৭ জন।
অপরদিকে এখনো দক্ষিণাঞ্চলে মোট আক্রান্ত রোগীর ২২%-এর বেশী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে না। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এ অঞ্চলের ৬টি জেলা ও ৪২টি উপজেলার হাসপাতালে মাত্র ২৬৭ জন করেনা সংক্রমিত রোগী ভর্তি হয়েছেন। যারমধ্যে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে ১৩৩ জন। সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৪জনের।
এমনকি গত ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলে নুতন করে সংক্রমিত ৮৪ জনের মধ্যে মাত্র ৬জন সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড রোগীর চাপে বিপর্যস্ত হতে চলেছে। গোটা দক্ষিণাঞ্চলের করোনা সংক্রমিত রোগীই এ হাসপাতালে আসছে। হাসপাতালটির করোনা ওয়ার্ডে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৪৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। এর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় নুতন ১জন ভর্তি হলেও কেউ ছাড়পত্র পায়নি।
এ হাসপাতালটির আইসোলেশন ওয়ার্ডে নতুন ৯ জন সহ মোট ২৩জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। এপর্যন্ত আইসালেশন ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত ২১৯ জনের ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৪১ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের।