এইচ আর হীরা :: বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও নির্ধারিত সময়ের পরেও ভোট গ্রহণের অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ৪ পৌরসভা পৌরসভা নির্বাচন। বরিশালের উজিরপুর,বাকেরগঞ্জ,কুয়াকাটা ও বেতাগী পৌরসভায় ২৮ ডিসেম্বর সোমবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয় এবং শেষ হয় বিকেল ৪টায়। চার পৌরসভা নির্বাচনে তিনটিতেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।শুধু মাত্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বিজয়ী হয়েছেন।
ভোটগ্রহণ শুরুর প্রথম দিকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটার। সারাদিন উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রদান করেন ভোটাররা।এবারই প্রথমবারের মতো পৌরসভা নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ভোটাররা যেমন নতুন উদ্দীপনায় ভোট দিয়েছেন তেমনি অনেক স্থানে এই মেশিনে ভোট দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ভোটাররা।পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় বিষয়টি বুঝে উঠতে না পেরে অনেকেই ভোট দিতে অধিক সময় নিয়েছেন।
এতে বাইরে লাইনে অপেক্ষা করে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বাকি ভোটারদের। আবার অনেক কেন্দ্রে আঙুলের ছাপ না মেলাতেও বিপাকে পড়েন ভোটাররা।চার পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যে বাকেরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী লোকমান হোসেন ডাকুয়া ৭ হাজার ৪১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী খলিলুর রহমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ৪১১ ভোট পেয়েছেন। এছাড়া বিএনপির প্রার্থী এসএম মনিরুজ্জামান ৯১৪ ভোট পেয়েছেন।
বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় ১৫ হাজার ৩০৪ ভোটের মধ্যে ১০ হাজার ৯৭টি ভোট পড়েছে।অন্যদিকে উজিরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনিত মেয়র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন বেপারী ৫ হাজার ৭০৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বিএনপির শহিদুল ইসলাম খান ৭৬৫ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ৬১০ ভোট পেয়েছেন। উজিরপুর পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৯২৪। এর মধ্যে ৭ হাজার ১৩২ ভোট পড়েছে।
অন্যদিকে বরগুনার বেতাগী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবিএম গোলাম কবির বিএনপি প্রার্থীর চেয়ে ১১ গুণ বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এবিএম গোলাম কবির নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ৬১০২ ভোট আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হুমায়ুন কবীর মল্লিক ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৫০৯ ভোট।
এদিকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বিজয়ী হয়েছেন। জগ প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৩৩ ভোট।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত আব্দুল বারেক মোল্লা নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ৭৮৪ ভোট।
উজিরপুর পৗরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন ১নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন অসীম ঘরামী, ২নং ওয়ার্ডে হেমায়েত উদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ডে নাসির সিকদার, ৪নং ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম মামুন, ৫নং ওয়ার্ডে মজিবর রহমান, ৬ ও ৭নং ওয়ার্ডে হাকিম সিকদার ও রিপন মোল্লা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়, ৮নং ওয়ার্ডে খায়রুল ইসলাম এবং ৯নং ওয়ার্ডে খবিরউদ্দিন নির্বাচিত হয়েছেন। পাশাপাশি সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডে আঁখি বেগম, সংরক্ষিত ২নং ওয়ার্ডে শামসুন্নাহার এবং সংরক্ষিত ৩নং ওয়ার্ডে রানী বেগম নির্বাচিত হয়েছেন।
বাকেরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন ১নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হযেছেন আবুল কালাম, ২নং ওয়ার্ডে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় খন্দকার জিয়াউর রহমান রিপন, ৩নং ওয়ার্ডে সুজন দেবনাথ, ৪নং ওয়ার্ডে সেলিম রেজা, ৫নং ওয়ার্ডে আমিরুজ্জামান রিপন, ৬নং ওয়ার্ডে মোকলেছুর রহমান, ৭নং ওয়ার্ডে খান মোহাম্মদ সেলিম, ৮নং ওয়ার্ডে জগদীশ মিত্র এবং ৯নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন নজরুল আকন। এছাড়াও সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন অঞ্জু রানী, সংরক্ষিত ২নং ওয়ার্ডে বানু বেগম এবং সংরক্ষিত ৩নং ওয়ার্ডে আনোয়ারা বেগম।
কুয়াকাটা পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন ১নং ওয়ার্ডে মো. হাবিবুর রহমান শরীফ, ২নং ওয়ার্ডে মোঃ. তৈয়বুর রহমান, ৩নং ওয়ার্ডে মো. মনির শরীফ, ৪নং ওয়ার্ডে মো. ফজলুল হক খান, ৫নং ওয়ার্ড মো. আবুল হাসন ফরাজী, ৬নং ওয়ার্ড মা. মজিবুর রহমান, ৭নং ওয়ার্ড শহীদ দেওয়ান, ৮নং ওয়ার্ড আশরাফ আলী সিকদার এবং ৯নং ওয়ার্ড মো. ছাবের হাসান কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। ১, ২, ৩নং ওয়ার্ড ময়না বেগম, ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ড তাছলিমা বেগম এবং ৭,৮,৯নং ওয়ার্ড হোসনে আরা বেগম সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে বরিশালের উজিরপুর পৌরসভা নির্বাচনে ৮টি ভোট কেন্দ্রে এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন বিএনপি প্রার্থী মো. সহিদুল ইসলাম। এছাড়াও সহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন,সন্ধ্যার পরেও ভোট গ্রহন করা হয়েছে উজিরপুরের দুই কেন্দ্রে। এবিষয়ে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন ব্যাপারী বলেন, মিথ্যা অভিযোগ করা বিএনপির মজ্জাগত স্বভাব। নিশ্চিত পরাজয় জেনে তিনি আবোলতাবোল বকছেন। এজেন্ট বের দেওয়া প্রসঙ্গে গিয়াস উদ্দিন বিডি ক্রাইমকে বলেন, জ্বালাও–পোড়াওয়ের রাজনীতি করে বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপির প্রার্থীর এজেন্ট দেওয়ার মতো কোনো ভোটার বা সমর্থক ছিল না।
বিএনপির প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার সম্পর্কে উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহাবুবুর রহমান বিডি ক্রাইমকে বলেন, নির্বাচন কমিশনে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তাঁকে আটক করা হয়েছিল। পরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেন।অতিরিক্ত সময়ে ভোট গ্রহনের কথা স্বীকার করে উজিরপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলিম উদ্দিন বিডি ক্রাইমকে জানান, নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট হওয়ার কথা।
কিন্তু উজিরপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ডব্লিউবি ইউনিয়ন ইনস্টিটিউট (সরকারি মডেল স্কুল) ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পরমানন্দ সাহা এলাকার রসুলাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের অনেক ভিড় ছিল। এজন্য নির্দিষ্ট সময়ে সবার ভোট নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে এ দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে দেরি হয়েছে।