জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আপিল বিভাগের শুনানিকালে আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, থ্রেট দেবেন না। আপনার কি থ্রেট করছেন, আদালত কখনো বাইরের পারসেপশন দেখে না।
বুধবার সকালে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে খালেদার জামিন স্থগিত করার পর আইনজীবীরা এজলাসে ক্ষোভ প্রকাশ করায় প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাববু হোসেন, জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বদরোদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল ও আতিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করার পর খালেদার আইনজীবীরা আদালতে বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা জন্য প্রার্থনা জানান। এ সময় তারা বলেন, ‘আদালত, খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত না করে আমরা আজই আবারও শুনানি করতে চাই।’
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এমন আবেদনে আদালত বলেন, শুনানির জন্য তারিখ তো দেওয়া হয়েছে। সেদিনই (রোববার) শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, ‘আমরা এ রায় মানব না।’ আইনজীবীদের এমন বক্তব্যে আদালত বলেন, আপনারা (খালেদার আইনজীবী) কি থ্রেট দিচ্ছেন? থ্রেট দেবেন না।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আপিল বিভাগে আগামী রোববার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত স্থগিত হওয়ার পর আদালতে এমন ঘটনার অবতীর্ণ হয়।
আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করা ছাড়া দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে আগামী রোববারের (১৮ মার্চ) মধ্যে আদালতে লিভ টু আপিল করা নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান ও খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদিন।
শুনানির শুরুতেই দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতকে বলেন, হাইকোর্ট ৪টি কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন। আমরা এখনও সে আদেশের সার্টিফায়েড কপি পাইনি। আদেশের কপি পেলে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করব।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, সিপি (লিভ টু আপিল) ফাইল করে আসেন। তখন দুদকের আইনজীবী বলেন, সিপি ফাইল করতে রোববার-সোমবার পর্যন্ত আমাদেরকে সময় দেওয়া হোক। এ পর্যন্ত জামিন স্থগিত রাখা হোক।
এরপর আদালত বলেন, ঠিক আছে সিপি ফাইল করে আসেন রোববারের মধ্যে। এ পর্যন্ত জামিন স্টে থাকবে।
তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, আমাদেরকে আগে শুনেন। আমাদের বক্তব্য (আসামি পক্ষের) তো শুনেন নাই। আমাদের না শুনে এভাবে আদেশ দিতে পারেন না। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, শুনতে হবে না। রোববার পর্যন্ত তো স্থগিত দিয়েছি। ওই দিন আসেন, তখন শুনব।
জয়নুল আবেদীন তখন প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি একতরফাভাবে শুনানি করে আদেশ দিলে, এতে আদালতের প্রতি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে।
জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না। কোর্টেকে কোর্টের মত চলতে দিন। এরপর জয়নুল আবেদীন ও এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, না শুনেই তো আদেশ দিলেন। পরে আদালত বলেন, আমরা অন্তবর্তীকালীন আদেশ দিয়েছি। আমাদের শোনার দরকার নেই।
জয়নুল আবেদীন বলেন, এই মামলায় চেম্বার আদালত তো স্টে দেয়নি। এই সময়ের মধ্যে আসামিও বের হবে না। তাই স্টের প্রয়োজন নেই।
এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা তো শুনানির সুযোগ পেলাম না। এরপরই আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকা থেকে অন্য মামলার শুনানি শুরু করেন আদালত।
সে মামলার শুনানির এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ দাঁড়িয়ে আদালতকে বলেন, আপনি তো না শুনেই একতরফা আদেশ দিলেন। আমাদের কথা শুনতে হবে। কেন শুনবেন না? তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, কার কথা শুনব? কার কথা শুনবো না তা কি আপনার কাছে শুনতে হবে?
গিয়াস উদ্দিন আবারও একটু উত্তেজিত হয়ে একই কথা বললে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন? জবাবে গিয়াস উদ্দিন বলেন, শুনে তারপর আদেশ দিতে হবে। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, থ্রেট দেবেন না।
এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আপনি তো কোর্টকে শেষ করে দিলেন। তখন অ্যাটর্নি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন একদল আইনজীবী দালাল দালাল বলে আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে ওই দিন বিকালে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখনও সেখানেই আছেন।