জিয়া শাহীন ॥ আজ এক বছর পূর্ণ হল। আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে সে। অনেকই এভাবে হারিয়ে যায়। প্রকৃতি- সে যে কঠোর নিয়মে নিয়ন্ত্রিত। রাতের দূর আকাশে তারাগুলোর মাঝে সন্তান তার প্রিয়জনকে খুজে সান্তনা পায়। তবে আমাদের সে সুযোগটুকুও নেই।
মধ্য রাত পর্যন্ত কম্পিউটারের বোতাম চাপতে চাপতে ঘুমের নেশাটুকু কেটে যায়। এরই মাঝে যথনই ফুসরত মেলে তখনই বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘস্বাস। দীর্ঘস্বাস বললে ভুল হবে। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। সব সময় সাংবাদিকদের বিপদে আপদে আগলে রাখার সেই তুখোর নেতা যে নেই।
সাংবাদিকতার প্রতিটি পদক্ষেপে যে তারই অদম্য সাহসিকতার নেতৃত্বগুনের অভাব এখন অনুভুত। সাংবাদিকদের পাশে দাড়াবার মত সেই সাহসী মানুষটি নেই এটা এখনও অবিস্বাস্যও। কিন্তু চীর সত্য। লিটন বাসার নেই আজ বছর পেরুলো। যে সাংবাদিকদের নিয়ে লিটন বাসার দিন রাত ছুটেছেন, বিপদে পাশে থেকেছেন তাদের নিয়ে ওপারে বসে লিটন বাসার কি ভাবছেন? যারা তার হাত ধরে নেতৃত্বের অমৃত স্বাদ আস্বাদন করছেন তাদের প্রতি লিটন বাসারের করুণামাখা দৃস্টি আর ঘৃণা বাতাসে কান পাতালেই অনুমিত হয়।
বিশ্বাসঘাতকতার তীব্র জ্বালা হয়ত সে সহ্য করতে পারেনি, তবে তিনি তাদের পরিনতি দেখছেন ওপারে বসে। মিটি মিটি হাসছেন কি? সাংবাদিকতার নেতৃত্বগুন নিয়েই তিনি মিডিয়াঙ্গনে প্রবেশ করেছিলেন। আজকের বার্তা কিংবা বাংলা বাজার অথবা ইত্তেফাক সব স্থানেই তার প্রমান মিলেছে। অসীম সাহস নিয়ে কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল আর জিএম বাবর আলীকে সাথে নিয়ে দৈনিক প্রতিদিনের মত একটি পত্রিকা সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর দখিনের মুখের যাত্রাও হয় তার হাত ধরে।
প্রতিদিনের প্রতিটি কোনায় কোনায় এখনও লিটন বাসারের বৃদ্ধিদীপ্ত সাফল্যের সুখস্মৃতি। অনেকের সাংবাদিকতার হাতে খড়িও হয় তার কাছ থেকে। আবার আমার মত অনেকই অনেক কিছু শিখেছি তার সান্নিধ্যে এসে। সততা, মানবতা, নেতৃত্বগুন মানুষকে কতটা সাফল্য এনে দিতে পারে তা লিটন বাসারের সান্নিধ্যে না এলে বোঝা যায় না। মাত্র কয়েকটা মাস তার কাছাকাছি যাবার সুযোগ হয়েছিল। আর তাতেই দেখেছি, বুঝেছি।
কেন তিনি সাংবাদিকদের এত প্রিয়। তবে তিনিও বুঝতে পারেননি তার অতি কাছের মানুষগুলোর রূপ এত দ্রুত পরিবর্তন হবে। তাই চলে গিয়েও হয়ত বেঁচে গেছেন তিনি। তিনি বেচে গেলেও সাংবাদিকতায় দুর্বল বা অক্ষত আমাদের মত কয়েকজনের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি।
এখন যে বড় প্রয়োজন লিটন বাসারের মত এক অসম সাহসী সাংবাদিক নেতার। নিজেদের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব, অনৈক্য মেটাতে আর অসহায় সাংবাদিকদের পাশে দাড়াতে আরেক লিটন বাসরের অপক্ষোয়। হয়ত শত বছরেও মিলবে না। হয়ত আগামী প্রজন্মও থাকবে এমন অপেক্ষায়। কেননা লিটন বাসাররা একবারই আসে, লিটন বাসার হয়েই।