সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে কষ্টের কথা জানিয়ে রাজশাহীতে এক গৃহবধূ ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। রহিমা আক্তার রেমি (২৪) নামে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এর আগে তিনি ফেসবুকে তিনটি ভিডিও পোস্ট করে তার হতাশা ও আত্মহত্যার কথা জানান।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে চারঘাট পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মিয়াপুরের ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠালে ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় দাফন সম্পন্ন হয়।
রহিমা আক্তার রেমির স্বামীর নাম সায়েম ইসলাম ওরফে সাগর। তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। তারা পুঠিয়া উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা। চারঘাট পৌর এলাকার ওই বাসায় তারা ভাড়া থাকতেন। ‘আত্মহত্যা’র সময় তিনি বাড়িতে একাই ছিলেন।
পুলিশ জানায়, আত্মহত্যা করার আগে রেমি ২৩ মিনিট, ১২ মিনিট ও ৫ মিনিট সময়কালের ৩টি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন।
২৩ মিনিটের ভিডিওতে রেমি বলেন, ‘কথা হইলো আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী কারা। প্রথমেই আমার বাবা ও ছোট (সৎ) মাকে বলি আমার প্রিয় মানুষটাকে (স্বামী) জেল, আইন-আদালতের পেছনে ঘুরাবা না। কারণ আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী তুমি (বাবা)। আজ যদি তুমি বিয়ে না করতে, আমার মাকে নিয়ে সংসার করতে তাহলে আমাকে নিয়ে এসব কথা বলার সাহস পেত না। জেল যদি কাউকে খাটতে হয় সে তোমার (বাবা)। সেটা একমাত্র তোমার। আর কারো না।’
আরও বলেন, ‘আমার হাজবেন্ডকে বলছি, তোমার নামে যদি কেউ এলিগেশন দেয় যে, তোমার মানসিক টর্চারে আমি মারা গেছি-তুমি তার নামে মামলা দিবা। ওর নামে দিবা মামলা, কারণ আমার বাবা মা ভালো হইলে কেউ সাহস পাইত।’
১২ মিনিটের ভিডিওতে রেমি বলেন, ‘আমি একটি বই লিখতে শুরু করেছিলাম। বইয়ের নাম রাখতে চেয়েছিলাম সুইসাইড। বই লেখা শেষ না করতেই আমি নিজেই সুইসাইড হয়ে গেলাম। বাবা-মা খারাপ হলে কিন্তু সন্তানরা খারাপ হয় না। এসব কথা শুনতে শুনতে বোর হয়ে গেছি। জীবন দিয়ে প্রমাণ করে দিতে চাই।’
স্বামীর উদ্দেশে রেমি বলেন, ‘তুমি সন্তানের বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালন করবে। আমি তোমাদের দুজনকে খুব ভালোবাসি। তোমার যখন চাকরি ছিলো না, বেকার ছিলে, তখন আমি তোমাকে ছেড়ে যাইনি। এখন তোমার চাকরি হয়েছে। যে নতুন জীবনসঙ্গী হবে তাকে সময় দিও।’
এ বিষয়ে চারঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রহিমা আক্তারের বাবার সাথে মায়ের ছাড়াছাড়ি হলে তিনি আরও একটি বিয়ে করেন। এতে একা হয়ে পড়েন রহিমা আক্তার। এ নিয়ে তিনি বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
ওসি আরও জানান, মঙ্গলবার ভোরে তিনি ফেসবুক লাইভে আসেন। এ সময় তিনি তার দুঃখের কথাগুলো বলেন। বাবা-মাকে নিয়ে অনেক কথাও বলেছেন তিনি। লাইভ শেষে গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। পরে সকালে পুলিশ পাঠিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের মর্গে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তার পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।