বাইশের শুরুতেই নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাফল্য ধরা দিয়েছিল। মাউন্ট মঙ্গানুইতে বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছিলেন মুমিনুল, মুশফিক, ইবাদত, লিটনরা। সাফল্যধারা পরবর্তীতে অব্যাহত থাকেনি।
দেশে বাইরে সবখানে ব্যর্থতার মিছিল। সুযোগ ছিল বছরের শেষটা রাঙানোর। ঢাকায় ভারতকে প্রায় বাগে পেয়েও গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ছোট ভুলে হাতছাড়া হয়েছে জয় নামক সোনার হরিণ। জয় সব সময়ই আনন্দের। তবে পরাজয়ের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে বীরত্বগাঁথা। ঢাকা টেস্টই তেমন কিছু। ৩ উইকেটের পরাজয় তৃপ্তি মেশানো হাহাকার। অর্জনের খেরোখাতাটি নেহায়েত অল্প নয়। সেই সুখস্মৃতিতে পরবর্তীতে বছরে চলার অঙ্গীকার বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছরে বাংলাদেশ তিন সিরিজে পাঁচটি টেস্ট খেলবে। টেস্টে ২২ বছর কাটিয়ে দেওয়া বাংলাদেশ কখনোই নির্দিষ্ট বছরে সবকটি টেস্ট জিতেনি। এ অর্জন অনেকটা ‘অপ্রত্যাশিত’ জানেন সাকিব আল হাসানও। তবুও সাফল্যের চূঁড়ায় উঠতে অপ্রত্যাশিত সাফল্য পাওয়ার ছক কষছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। খুব কম সময়ই সাকিব ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করেন। অথচ সামনের বছর কতগুলো টেস্ট সিরিজ আছে, কতগুলো ম্যাচ হবে সেগুলো নিয়ে পরিকল্পনা করা শুরু করে দিয়েছেন।
ঢাকা টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব সেসব সাফল্য অর্জনের কথাই বললেন, ‘২০২৩ সালে আমাদের তিনটা বা পাঁচটা টেস্ট ম্যাচ আছে এফটিপিতে, যেটা আমি জানি। আমি মনে করি তিনটি সিরিজই আমাদের জেতা উচিত, যে ধরনের দলের সঙ্গে আমরা খেলব। অবশ্যই জেতা উচিত।’
যে ধরণের দল বলতে সাকিব বুঝিয়েছেন নিজেদের থেকে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা দলকে। বাংলাদেশ মার্চ-এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে একটি টেস্ট খেলবে। জুন-জুলাইয়ে আফগানিস্তান পূর্ণাঙ্গ সফরে আসবে। খেলবে দুটি টেস্ট। বছরের শেষ দিকে নিউ জিল্যান্ড বাংলাদেশ সফরে এসে দুটি টেস্ট খেলবে।
ঘরের মাঠে সবগুলো টেস্টে ভালো করার সূবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না সাকিব। তাইতো সাফল্যের ছক এখন থেকেই করছেন অধিনায়ক। শুধু টেস্টে নয়, আগামী দুই বছরে সীমিত পরিসরেও ভালো করার প্রবল সম্ভাবনা দেখছেন সাকিব।
টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ফরম্যাট নিয়ে আলাদা করে কথা বলেছেন তিনি, ‘টি-টোয়েন্টিতেও আমরা বেশ ভালো একটা অবস্থায় চলে আসছি। আমার ধারণা, ৬ মাসের মধ্যে আমরা এক দল দাঁড় করাতে পারব যেটা ২০২৪ বিশ্বকাপে খুব ভালো করবে, যেটা আমরা হয়তো প্রত্যাশাও করি না, ততটা ভালো করার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করি, যেহেতু বিশ্বকাপটা ওয়েস্ট ইন্ডিজে।’
‘ওয়ানডেতে আমরা সেটেলড দল, যেখানে আমাদের ভালো না করার কোনো কারণই নেই। ২০১৪ সালের পর থেকে ঘরের মাঠে মনে হয় একটা সিরিজ হেরেছি কেবল। ওয়ানডেতে খারাপ করার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না।’ – যোগ করেন সাকিব।
আইসিসি ইভেন্ট বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘশ্বাসের এক নাম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কিংবা ওয়ানডে; প্রত্যাশার যে রেণু ছড়িয়ে দেন সাকিব, মুশফিকরা তা পূরণ করতে পারেন না। ২০২৩ বিশ্বকাপ হতে পারে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তামিমদের শেষ বিশ্বকাপ।
এবার ভালো করার সর্বোচ্চ সুযোগ দেখছেন সাকিব, ‘বিশ্বকাপের বছর, অবশ্যই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এই একটা জায়গায় আমরা যে ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে যাই, সেভাবে পারফর্ম করতে পারি না। তবে আমরা যদি, দল হয়ে খেলতে পারি, অবদান সব জায়গা থেকে আসে, তাহলে আমার ধারণা এই বিশ্বকাপ আমাদের খুব ভালো যাবে।’
আগামী বছর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ম্যাচ শুরু হবে ইংল্যান্ডকে আতিথেয়তা দিয়ে। তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে মার্চে ঢাকায় আসবে ইংল্যান্ড। এরপর ধাপে ধাপে বাড়বে আন্তর্জাতিক ব্যস্ততা। যেখানে ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাদেও আছে এশিয়া কাপ।