তৃতীয় সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত তৃতীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি প্রস্তাব ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে দিয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি-বিএসসিসিএল। এখন প্রস্তাবকে ঘিরে সরকারি নিয়মে বিশদ প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির কাজ শুরু হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মন্ত্রী জানান, দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। এ অবস্থায় নতুন আর একটি সাবমেরিন কেবল সংযোগ স্থাপন করে ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে সংকটের সৃষ্টি হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই তৃতীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগ স্থাপনের ব্যাপারে উপায় খুঁজে বের করতে বিএসসিসিএলকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তারা একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এটার ওপরই কাজ শুরু হয়েছে।
বিএসসিসিএল সূত্র জানায়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সিঙ্গাপুরের একটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে সাবমেরিন কেবল সংযোগ স্থাপন করা হবে। ওই কোম্পানির মোট চার জোড়া কেবল থাকবে। প্রতি জোড়া কেবলের সক্ষমতা হবে আট টেরাবাইট বা আট হাজার জিবিপিএস। বাংলাদেশ প্রথম পর্যায়ে এক জোড়া কেবল সংযোগ বা আট হাজার জিবিপিএস সক্ষমতা সংযোগ নেবে। সাবমেরিন কেবলের সম্ভাব্য ল্যান্ডিং স্টেশন হতে পারে চট্টগ্রামে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেড় হাজার জিবিপিএস সক্ষমতার দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল থেকে প্রায় ৩০০ জিবিপিএস ব্যবহূত হচ্ছে। অপর একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয় প্রায় ৯০০ জিবিপিস। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের বাইরে বাকি ব্যান্ডউইথ আসছে প্রথম সাবমেরিন কেবল এবং ভারত থেকে ভূমির মধ্য দিয়ে আসা কেবল বা টেরেস্ট্রিয়াল কেবল থেকে।
মোস্তাফা জব্বার জানান, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির চিত্র থেকে দেখা যায় গত চার-পাঁচ মাসেই ব্যবহার প্রায় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে ফোরজি প্রযুক্তি চালু এবং সারা দেশে ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে ইন্টারনেটের ব্যবহার আগামী দিনগুলোতে আরও দ্রুতগতিতে বাড়বে। এর ফলে বিদ্যমান প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের যে সমক্ষতা আছে, তা দিয়ে ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইথের চাহিদা বেশিদিন পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় তৃতীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগ বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে টেরেস্ট্রিয়াল কেবলের মাধ্যমে আসা ব্যান্ডউইথের গুণগত মান বা লেটেন্সি ভালো নয়। এর চেয়ে সাবমেনির কেবল দিয়ে আসা ব্যান্ডউইথের গুণগত মান অনেক ভালো। এ কারণে ভারত থেকে আসা টেরেস্ট্রিয়াল কেবলের ওপর থেকে নির্ভরতাও কমাতে হবে। এই নির্ভরতা কমানোর জন্যও তৃতীয় সাবমেরিন কেবলের বিকল্প নেই।
দেশে এর আগে দুটি সাবমেরিন কেবল সি-মিই-উই-৪ এবং সি-মিই-উই-৫ স্থাপন করা হয় দুটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে। ২০০৬ সালে এবং ২০১৭ সালে এ দুটি সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার শুরু হয়। তবে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, তৃতীয় সাবমেরিন কেবলটি কোন কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ আবার কতদিনে নতুন কনসোর্টিয়াম হবে তার জন্য অপেক্ষা করলে ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইথের চাহিদা মোকাবেলা করা যাবে না। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত সাবমেরিন কেবল স্থাপন করা হতে পারে অন্য কোনো কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে। তবে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত যেসব দেশ পড়বে, তারা এ সংযোগে যুক্ত হতে চাইলে তা বিবেচনা করা হবে।
মন্ত্রী জানান, তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের জন্য সরকারি নিয়মে ডিপিপি তৈরি করা হচ্ছে। এই প্রস্তাবের ভেতরে প্রকল্পের জন্য যৌক্তিক ব্যয় নির্ধারণসহ এর কারিগরি দিক সুনির্দিষ্ট করা হবে। এরপর প্রকল্পটি পাসের জন্য সরকারি উচ্চ পর্যায়ে পেশ করা হবে।