প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এমনভাবে পালন করা হবে এবং এমন অনুষ্ঠান করা হবে যাতে তৃণমূল পর্যন্ত বুঝতে পারে। একই সঙ্গে এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যদিয়ে যেন এ দেশের মানুষ সঠিক ইতিহাস জানতে পারে।
তিনি বলেন, শুধু ঢাকা শহর বা দেশের বড় বড় শহরে যেন এটা সীমাবদ্ধ না থাকে, আমরা সারাদেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানমালা ছড়িয়ে দিতে চাই।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তেজগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এবং বাস্তবায়ন কমিটির যৌথসভায় এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং মতিয়া চৌধুরী, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন অভিমত ব্যক্ত করেন।
সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ইতোমধ্যেই ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে তা যথাযথভাবে উদযাপনে বিশিষ্টজনদের নিয়ে ১০২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি এবং বাস্তায়নের জন্য ৬১ সদস্যবিশিষ্ট যে কমিটি করেছে, আজ ছিল তারই প্রথম যৌথ সভা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এদেশের মানুষ যাতে উদ্বুদ্ধ হয় এবং বাংলাদেশকে সারাবিশ্বের কাছে একটা মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে যেন আমরা গড়ে তুলতে পারি সে কারণেই আমাদের এ উদ্যোগ। মুজিব বর্ষের প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সারাদেশের সকল জেলা, উপজেলা, থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানমালা চলবে।
তিনি বলেন, মার্চ মাসটা আমাদের জন্য খুবই অর্থবহ মাস। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন। আবার ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। কাজেই ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বছরটাই আমরা মুজিব বর্ষ হিসেবে উদযাপন করব।
শেখ হাসিনা বলেন, জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে এ দেশের মানুষের জন্যই কষ্ট স্বীকার করে গেছেন জাতির পিতা। আর সেই কষ্টের ফসল হিসেবেই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, স্বাধীন জাতির মর্যাদা। কাজেই এটা আজকে আমাদের একটা জাতীয় কর্তব্য। আমি মনে করি, তার জন্মশতবার্ষিকী আমরা ভালোভাবে উদযাপন করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা তার জীবনের সবথেকে মূল্যবান সময় এদেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ব্যয় করেছেন। মানুষের ওপর অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দিনের পর দিন কারাবরণ করেছেন। তিনি বলেন, সন্তান হিসেবে আমরা পিতৃস্নেহ বঞ্চিত হয়েছি। কেননা জীবনের মূল্যবান সময়গুলো কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠেই তিনি কাটিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই জন্মশতবার্ষিকীটা উদযাপনে আমাদের সমাজে যারা বিশিষ্টবিজ্ঞজন তাদের নিয়ে আমরা একটা কমিটি করেছি ১০২ সদস্যবিশিষ্ট। তবে এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এই কমিটিতে থাকা দরকার যাদেরকে আমরা ধীরে ধীরে অন্তর্ভুক্ত করে নেব। আর সেই সাথে আমরা আরেকটি কমিটি করেছি একশ সদস্যবিশিষ্ট, যারা সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাছাড়া বিভিন্নভাবে যেসব কমিটি করা প্রয়োজন সে ব্যাপারেও আপনাদের পরামর্শ নেব। কেননা, এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। দল হিসেবেও আওয়ামী লীগের আলাদা একটা কমিটি করেছি। সেক্ষেত্রে আপনাদের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের হাতেও সময় খুব বেশি নেই। কারণ নির্বাচনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেছে।