আজ রোববার থেকে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলন শুরু হচ্ছে। তবে রেওয়াজ থাকলেও এবারও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সাক্ষাৎ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘সময় মেলাতে না পারায় এ বছর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কোনো অধিবেশন থাকছে না।’
এছাড়া সম্মেলনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখা হবে বলেও মন্তব্য করেন ড. আব্দুর রশীদ। শনিবার সচিবালয়ে ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
ড. শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে এ বছরের ডিসি সম্মেলন। এটি চলবে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত বছরের মতো এবারও সম্মেলনের মূল ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। সম্মেলনে চারটি বিশেষ ও ৩০টি কার্য অধিবেশন থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি মুক্ত আলোচনা এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের একটি সভা। এই চারটি বাদ দিয়ে বাকি ৩০টি হবে কর্মঅধিবেশন। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাটি হবে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে নির্দেশনা গ্রহণের যে একটি প্রোগ্রাম আছে, সেটি হবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে। আর প্রধান উপদেষ্টার অফিসের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি এবং তার (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে আরেকটি কর্ম অধিবেশনসহ দুটো হবে প্রধান উপদেষ্টার অফিসে। অংশগ্রহণকারী মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা ৫৬টি। বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ১ হাজার ২৪৫টি প্রস্তাবের ৩৫৪টি প্রস্তাব কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে আলোচনা হবে।
এবারের সম্মেলনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখা হবে বলেও জানিয়ে ড. শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার পর সরকারের দর্শনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার পর আগের সরকারের দর্শনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন জনের নামে সড়ক, সেতুর মতো অবকাঠামোগতসহ কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে বিগত সম্মেলনগুলোর তুলনায় এ বছর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার কম হয়েছে। তবে মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে গত বছরের সম্মেলনের বাস্তবায়ন অগ্রগতি হার ৪৬ শতাংশ থেকে আরও বাড়বে। এ বছর ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বাজেট আছে। কিছু কম হবে বলে আশা করি।’
প্রস্তাবের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এমপিওভুক্তি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যা আয় হয়, তা কীভাবে ব্যয় হয় জানা যায় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। তার হিসাব রাখার প্রস্তাব করেছেন একজন ডিসি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে বডি ক্যামেরা রাখা, মারণাস্ত্র ও ছররা গুলি না রাখার প্রস্তাব আছে। সার্কিট হাউজে গুরুত্বপূর্ণ অতিথি থাকলে কেপিআই হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব আছে। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে অনিয়ম দূর করতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে এক জনকে রাখার প্রস্তাব আছে।
তিনি আরও বলেন, এবারের প্রধান প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে—ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদারকরণে ব্যবস্থা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং আরও অন্যান্য বিষয়; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ পরিষেবার উন্নয়ন, পরিবার সংরক্ষণ ও দূষণ রোধের বিষয়ে আলোচনা, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।
২০২৪ সালের সম্মেলনের ৪৬ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি মোট ৩৮১টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১৭৭টি সিদ্ধান্ত। বাস্তবায়নাধীন ২০৪টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৪৬ শতাংশ। যেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনাধীন, সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন হিসেবে দেখানো হয়েছে। যেসব সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ/সিদ্ধান্তের অধিকাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে, সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ/কার্যালয়ের যথাযথ তৎপরতা, আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৪-এ গৃহীত সিদ্ধান্তের শতকরা ৪৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। গত বছর (২০২৪) ডিসি সম্মেলন চলাকালে এর আগের বছরের (২০২৩) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ছিল ৬২ শতাংশ, ২০২৫-এ এসে দেখা গেছে ২০২৩-এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি ছিল ৭৬ শতাংশ বলেও জানান শেখ আব্দুর রশীদ।