রংপুরের পীরগাছায় তালাকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রাক্তন স্ত্রীর বড়ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন মিজানুর রহমান সুফিয়ান (৩৫) নামের এক যুবক। এসময় তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকেও কুপিয়ে আহত করেন তিনি। পরে প্রাক্তন স্ত্রীর বাবার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে নিজেও বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ি ইউনিয়নের মকরমপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রোকনুজ্জামান রোকন (৪৮) ওই গ্রামের তয়েজ উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোকনের বোন সুমি খাতুনকে (৩৩) প্রায় আট বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন একই ইউনিয়নের সুবিদ গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে সুফিয়ান। তাদের একটি ছয় বছরের মেয়ে সন্তান রয়েছে। কিন্তু প্রথম থেকেই এ বিয়ে মেনে নিতে পারেননি সুমির বড় ভাই রোকনুজ্জামান রোকন। পারিবারিকভাবে বনিবনা না হওয়ায় বছরখানেক আগে সুফিয়ানকে তালাক দিয়ে ঢাকায় চাকরি করতে চলে যান সুমি। শিশুটি থাকতো নানির কাছে। এরপরও সুমিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলে প্রতিবারই সুফিয়ানকে বাধা দেয় রোকন। এতে সাবেক স্ত্রীর বড় ভাইয়ের প্রতি তার ক্ষোভ তৈরি হয়।
তিনদিন আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন সুমি। ঘটনার দিন সোমবার সন্ধ্যায় বোন সুমিকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি থেকে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশনে যাওয়ার পথে ইছলার বাজার-মকরমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঝামাঝি স্থানে পৌঁছালে তাদের পথরোধ করেন সুফিয়ান। এসময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হন রোকন ও সুমি।
পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোকনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে রোকন ও সুমিকে কোপানোর পর সাবেক শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন সুফিয়ান। এতে বাড়ির পাকা ভবন পুড়ে যায়। আগুন দেওয়ার পর নিজেও বিষপান করেন সুফিয়ান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্বশুর বাড়ির পূর্বদিকের সড়কে পড়ে থাকা অবস্থায় সুফিয়ানকে উদ্ধার করে। পরে তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. নাহিদুজ্জামান তালুকদার বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই রোকনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিষপান করায় সুফিয়ানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ও সুমিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুরেশ চন্দ্র ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রংপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-সি) আশরাফুল আলম পলাশ জানান, আগুনে পাঁচটি ঘর পুড়ে গেছে। অভিযুক্ত সুফিয়ান পুলিশ হেফাজতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।