তার বাবা ছিলেন মাগুরার সেই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের সময় কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করার ঘটনা ঘটে। এদের একজনের ছবি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

যিনি মারধর ও বিবস্ত্র করেছেন তার নাম-পরিচয় প্রকাশ হয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শায়লা শারমিন। আর যে মেয়েটিকে বিবস্ত্র করা হয়েছে, ছবি ও বিভিন্ন খবর দেখে তিনি নিজেই পরিচয় প্রকাশ করেছেন। তার নাম শ্রবণী শফিক দীপ্তি। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা শফিকুজ্জামান বাচ্চু। তিনি মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং ১৯৯৪ সালে ওই আসনে আলোচিত উপনির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন। শুধু তাই নয়, তার দাদা প্রয়াত আসাদুজ্জামানও ছিলেন সংসদ সদস্য।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একটি ছবি দিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে প্রচার চালানোয় দীপ্তি নিজের পরিচয় তুলে ধরে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন।

দীপ্তি বলেনন, ‌‌ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতানেত্রীরা একটি ছবি গণহারে শেয়ার করছেন। সেই ছবিতে দেখানো হচ্ছে, একটি মেয়েকে ঘিরে আছে কয়েকজন ছেলে। মেয়েটি কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শায়লা শ্রাবণী। তারা দাবি করছেন যে, শ্রাবণীকে ঘিরে থাকা ছেলেরা ওকে হ্যারাস করছিল।

দীপ্তি আরও বলেন, ‘আমি আজকে ছাত্রলীগের হামলার শিকার। আমি প্রকৃত ঘটনাটা সম্পর্কে আপনাদের জানাতে চাই।’

‘আন্দোলনে দফায় দফায় ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এক পর্যায়ে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে চতুর্দিক থেকে ছাত্রলীগ দ্বারা ঘেরাও থাকা আমরা বের হতে গেলে তারা ভয়ংকরভাবে হামলে পড়ে। সেখানে আমাকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতানেত্রী কিল ঘুষি দিচ্ছিল, টানা হেঁচড়া করছিল, চড় থাপড় দিচ্ছিল। একপর্যায়ে আমার পেটে একটা লাথি পড়ে এবং আমি কোণায় ছিটকে পড়ি। এরপর আমার ভাই, বন্ধু ও সাংবাদিক ভাইয়েরা আক্রমণকারীদের নিরস্ত করতে চেষ্টা করলে এই মেয়েটি তাদের গালিগালাজ করতে করতে ব্যারিকেড ভেঙে আসতে চেষ্টা করে।’

‘আমার সাহায্যকারীরা তাকে কোনমতে গায়ে হাত না দিয়ে নিরস্ত করার চেষ্টা করছিল। যেটার ছবি ছাত্রলীগের নেতানেত্রীরা শেয়ার করছেন। কিন্তু সেই পর্যায়ে আরেকদিকে আমাদের এক সিনিয়র আপুর বুকে ছাত্রলীগের ছেলেরা ক্রমাগত লাথি দিলে আমার বন্ধুরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়। আমাকে একা পেয়ে এই মেয়েটি ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকে।’

‘আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। সে আমাকে তখনও মেরে যাচ্ছিল আর বলে যাচ্ছিল, কেন আন্দোলন করলি? আন্দোলন করে কী … ফ্যালাবি আমরা তা দেখে নেব।’

‘ছবিতে আমার ওপর হামলা করতে দেখা যাচ্ছে মেয়েটিকে এবং সে আমার চুল ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, জামা টান দিয়ে ছিড়ছে,’ উল্লেখ করেন দীপ্তি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে দীপ্তি লিখেছেন, ‘এখন বলেন কে কাকে নিপীড়ন করেছে? এতো স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়ার পরেও আপনারা এই বিভ্রান্তিতে ভাসবেন? নাকি আমাদের উপর ভিসি স্যার ও প্রক্টর স্যারের প্রত্যক্ষ মদদে হওয়া এই বর্বরোচিত হামলার বিচার চাইবেন? এবং জানিয়ে দিতে চাই, আমি কোন বাম করি না, ছাত্রদল করি না, শিবির করি না, ছাত্রলীগও কখনো করি নাই। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ট্যাগহীন একজন জেনারেল স্টুডেন্ট। বরং আমার বাপ ৯৪ সালের সেই বিতর্কিত মাগুরা-২ উপনির্বাচনে আওয়ামি লীগের প্রার্থী।’