সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল রফিক-উল হক কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনা করেছেন। বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও পড়েছেন ইসলামিয়া কলেজে। থাকতেন বেকার হোস্টেলে। একসময় ওখানে বঙ্গবন্ধুও ছিলেন। রফিক-উল হক যে কক্ষে ছিলেন, তার পাশের দুটি কক্ষই এখন বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম করা হয়েছে।
পত্রিকায় অবশ্য খবর বেরিয়েছিল, রফিক-উল হক সেই মিউজিয়াম উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন। ২৬ ও ২৭ নম্বর কক্ষ এখন বঙ্গবন্ধু জাদুঘর। রফিক-উল হক পাশের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার ভাইয়েরাও ওখানে থেকেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় রফিক-উল হক কারমাইকেল হোস্টেলে থেকেছেন। ওখানেও বঙ্গবন্ধু কিছুদিন ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একদিনের স্মৃতির কথা উল্লেখ কর রফিক-উল হক বলেছিলন, ‘খুবই মনে পড়ে, তিনি (বঙ্গবন্ধু) যখন কারমাইকেল হোস্টেলে ছিলেন, তখন হঠাৎ একদিন বঙ্গবন্ধু হাজির হলেন একজন অ্যাডভোকেটের সঙ্গে। শেখ মুজিব ক্যান্টিন পরিচালক জসিমকে দেখে বললেন, এই জসিম, আমার কাছে বাকি নেই তো? জসিম খাতা নিয়ে এল। বলল, হ্যাঁ সাব, ৩৬ রুপি।’
‘তখন বঙ্গবন্ধু আমাকে (রফিক-উল হক) বললেন, এই, ওকে কিছু টাকা দিয়ে দে। এসব কিছু আজ খুব মনে পড়ে।’
রফিক-উল হক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেন। তিনি সোশ্যাল সেক্রেটারি ছিলেন। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করে তিনি জিতেছিলেন। সেই সময় মুসলমান ছাত্র মাত্র চার-পাঁচজন ছিলেন। তারপরও তিনি অনেক ভোটে জিতে যান।
রফিক-উল হক বলেছিলেন, ‘পরের বার সবাই মিলে আমাকে হারাবে বলে ঠিক করল। আমার কাজ ছিল ছাত্রদের বই, ক্যান্টিন, ট্যুরের ব্যবস্থা করা। তখন ক্যাম্পাসের বাইরে পলিটিকসে জড়িত হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আর যুব কংগ্রেস করতাম। কংগ্রেস বলতে ন্যাশনাল পলিটিকস না। আমি তখন ওয়েস্ট বেঙ্গল যুব কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তখন আমার নেত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন সেন্ট্রাল যুব কংগ্রেসের সভাপতি আর আমি ছিলাম ওয়েস্ট বেঙ্গলে। সুতরাং ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আমার বহুবার দেখা হয়েছে, বহুবার মিটিং হয়েছে, কাজ করার সুযোগ হয়েছে।’
তিনি বলেছিলেন, ‘একটা খুব বড় মিটিং করেছিলাম সল্টলেকে, ইন্দিরা গান্ধী, নেহরু, বিধান রায় ছিলেন। সে আরেক ইতিহাস। কলকাতায় পড়ার সময় আমার বন্ধু ছিলেন ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।’
আইনের এই বাতিঘরের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে। বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। আর মা নূরজাহান বেগম। তবে তার বাল্যকাল কেটেছে কলকাতার চেতলায়। পরিবারের সবাই চেতলাতেই থাকতেন। পড়াশোনা করেছেন চেতলা স্কুলে। চেতলা এখন কলকাতার অন্তর্ভুক্ত। চেতলা স্কুলে রফিক-উল হকের পরিবারের সবাই পড়াশোনা করেছেন।
শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আইনের বাতিঘর খ্যাত এই আইনজীবী। বেঁচে থাকলে আগামী বছর ২৮ ফেব্রুয়ারিতে আইন পেশায় ৬২ বছরে পা রাখতেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।
শুধু বাংলাদেশেরই নয়, ভারত, পাকিস্তান ও ব্রিটেনের নাগরিক হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার ঝুড়িতে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com