তারুণ্যে ভরসা রাখতেই পারে বাংলাদেশের ফুটবল

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

এশিয়ান গেমসে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা থাইদের বিপক্ষে এই ড্র ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতেই পারে। তারুণ্য-নির্ভর বাংলাদেশ দলও স্বপ্ন দেখাচ্ছে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের

ক্রমাগত হার ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে হতাশার অন্ধকারে ডুবে আছে দেশের ফুটবল। কারা দেখাবে আশার আলো, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে দেয়ালে পিঠ ঠেকা অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস দেখাচ্ছেন কিছু তরুণ ফুটবলার। জাকার্তা এশিয়ান গেমসে আজ শক্তিশালী থাইল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করল বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ের প্রেক্ষিতে র‍্যাঙ্কিংয়ে ৭২ ধাপ এগিয়ে থাকা থাইদের বিপক্ষে এই ড্র তো বাংলাদেশের জন্য অনেকটা জয়ের সমানই—আত্মবিশ্বাস জাগানিয়া ফল। আর এই ফলটা এল সেই তরুণ সম্ভাবনাময় ফুটবলারদের হাতে ধরেই।

মাহবুবুর রহমান সুফিল, সাদউদ্দিন, বিপলু আহমেদ, মাশুক মিয়া জনি, বিশ্বনাথ ঘোষ, আতিকুর রহমান ফাহাদ— নামগুলো অপরিচিত লাগারই কথা দর্শকদের। কিন্তু নীরবে-নিঃশব্দে এই তরুণদের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশের ফুটবল। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের সঙ্গে একই গ্রুপে উজবেকিস্তান, কাতার ও থাইল্যান্ড। শক্তিশালী এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা তো নেই-ই, গোল বন্যায় ভেসে যাবে বাংলাদেশ—এমন আশঙ্কাই ছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ গোলে হারলেও ফুটবলারদের শরীরী ভাষায় দেখা গেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ। আজ তো থাইল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টা প্রায় এসেই গিয়েছিল। ৫২ মিনিটে মাহবুবুর রহমান সুফিলের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ৭৯ মিনিটে গোলরক্ষক আশরাফুল রানা ও রক্ষণের ভুলে বাজে গোল না খেলে ১৯৮৯ সালের পর থাইল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ফুটবলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারত বাংলাদেশ।

কিছুদিন আগেও অভিযোগ ছিল, আমাদের ফুটবলাররা তো নিজেদের মধ্যে ১০টি পাসই খেলতে পারে না। অন্তত এশিয়ান গেমসের দুটি ম্যাচ যারা দেখেছেন, তারা নিজেদের মত বদলালেও বদলাতে পারেন। আজ নিচ থেকে গোলরক্ষক-ডিফেন্ডারদের পা হয়ে বিল্ডআপ আক্রমণ দেখা গেছে বেশ কয়েকবার। বলের দখল রাখায় বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও গোটা ম্যাচে থাইল্যান্ডকে অনেকবারই চাপে ফেলেছে তারা। কার্যকর ফুটবল বলতে যা বোঝায়, সেটি দেখা গেছে ভালোভাবেই। নিজেদের অ্যাটাকিং থার্ডে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন খেলোয়াড়েরা। প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙতে খেলোয়াড়দের তীব্র ইচ্ছাশক্তিটাই আশা জাগাচ্ছে এই দল নিয়ে।

দলটির সবচেয়ে বড় অর্জন লড়াই করার মানসিকতা, হারার আগে হার মেনে না নেওয়া। এই মানসিকতা দেখা যাচ্ছে গত বছরের অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ থেকে। ভারতের বিপক্ষে প্রথমার্ধে তিন গোল হজমের পরে দ্বিতীয়ার্ধে চার গোল দিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার ব্যাপারটি ইতিহাস হয়ে আছে। সেই দলের অনেকেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে গত মার্চে লাওসের বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে পড়া ম্যাচে ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল। সেদিনও গোল করেছিলেন এই সুফিল। অন্য গোলটিও আরেক সম্ভাবনাময় তরুণ জাফর ইকবালের।

আগামী মাসে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এই তরুণদের নিয়ে স্বপ্নটা দেখা যেতেই পারে। এই আসরে তো গত তিনটি আসর গ্রুপ পর্বের বাধাই পেরিয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার সেমিতে খেলাটাই তাই হবে বড় সাফল্য। আর সাফে যদি কিছু নাও করে দেখানো যায়, ভবিষ্যৎ তো পড়েই আছে। এখন এই খেলোয়াড়দের কেবল একটু গড়ে নেওয়ার পালা। ইংলিশ কোচ জেমি ডের ওপর ভরসাটা তাই রাখতেই হচ্ছে। কে জানে এই তরুণেরাই হয়তো শিগগিরই পাল্টে দেবে বাংলাদেশের ফুটবলের দৃশ্যপট।