তরুণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে বরগুনা জেলায় স্থাপিত হল প্রথম শিশুপার্ক

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বরগুনা জেলা শহরে প্রথমবারের মত স্থাপিত হল শিশুদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র – শিশু পার্ক। গতকাল ১২ আগস্ট বরগুনার আরডিএফ মিলনায়তন -এ ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল -এর বরগুনা ফেলো এ্যলামনাই এ্যসোসিয়েশন, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল -এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল “বরগুনার প্রথম শিশু পার্ক -এর শুভ উদ্বোধন এবং ভবিষ্যত রক্ষণাবেক্ষণ ভাবনা” শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক।

ইতিহাস অনুযায়ী, বরগুনা ছিল একসময় সুন্দরবনের অংশ। সময়ের পরিক্রমায় গাছ কেটে বসতি স্থাপন করা হয়। জন্ম ঘটে বরগুনার। সেই ঐতিহ্যবাহী বন ও নদী বিধৌত প্রায় নয় লাখ অধীবাসীর বরগুনা জেলায় এতদিন ছিল না শিশুদের জন্য কোন বিনোদন কেন্দ্র। ২৮ মার্চ ২০১৮ বরগুনার ”জাগো নারী” মিলনায়তনে স্থানীয় সমস্যা চিহ্নিতকরণ বিষয়ে এক সভা আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল-এর বরগুনা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-এর এ্যলামনাই ফেলোবৃন্দ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪ এপ্রিল বরগুনা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরগণ, স্কুল কেবিনেটের প্রতিনিধিগণ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক কর্মকতাসহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে গোল টেবিল বৈঠক আয়োজিত হয়। এর প্রতিপাদ্য ছিল “আজকের শিশুদের মাঝেই হবে আগামীর বীজ রোপন – তাই বরগুনায় চাই ”শিশুদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন”।”

আলোচনায় উঠে আসে পুলিশ লাইন সংলগ্ন শিশু পার্ক স্থাপনের প্রস্তাব। অনুষ্ঠানে বক্তব্যে পুলিশ সুপার বিজয় বসাক, বিপিএম, পিপিএম আশ্বাস দেন পুলিশ লাইন সংলগ্ন স্থানে পৌর মেয়রের সাথে যৌথ চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়েই শিশুপার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। পরবর্তীতে ২৮ জুন ২০১৮ পুলিশ লাইন মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় “বরগুনায় শিশুদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনঃ অগ্রগতি পর্যালোচনা” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। সেখানে আরও জোড়ালোভাবে তুলে ধরা হয় শিশুদের জন্য বিনোদন কেন্দ্রের দাবী। এক ছাত্র বলেন, তিনি ছোটবেলায় শিশুপার্ক পাননি, এখনকার প্রজন্ম অন্তত সেই সুবিধাটুকু পাক। এক ব্যবসায়ী স্বেচ্ছায় অর্থ অনুদান দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। একই দিনে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠিত হয় এবং বরগুনার বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ে এই দাবী বাস্তবায়নে।

আয়োজকদের বক্তব্য মতে, বরগুনার মত একটি জেলা শহরে শিশুদের জন্য নেই কোন বিনোদন কেন্দ্র বা খেলার স্থান। কোমলমতি শিশুদের জন্য নির্মল বিনোদন অপরিহার্য, যা পাওয়া যেতে পারে প্রকৃতির সংস্পর্শে । কিন্তু বরগুনা শহরে শিশুদের নিয়ে কোথাও যেতে হিমশিম খেতে হয় অভিভাবকদের, নেই শিশুদের বিনোদনের জন্য কোন উপযুক্ত স্থান। সার্বক্ষণিক পড়াশুনার চাপে বিনোদন বলতে এখন যেনো শুধু টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল যার অধিক ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিশুদের শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, মেধাবিকাশ ও মননশীলতা। তার উপর স্কুল-কোচিং ও প্রাইভেটের চাপে একপ্রকার রোবট জীবনযাপন করছে এখানকার শিশুরা যা কেড়ে নিচ্ছে তাদের স্বাভাবিক প্রাণোচ্ছলতা। এমনটাই চলতে থাকলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শারীরিক-মানসিক সুস্থতার জন্য হবে এক বিশাল হুমকিস্বরূপ।

তারা অন্যান্য জেলার বেশ কিছু বিনোদন কেন্দ্রের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ”বরগুনা শহরেও যদি এরকম কোন পার্ক স্থাপন করা যায় যেখানে শিশুরা নিবিঘ্নে আনন্দ নিতে পারবে এবং অভিভাবকরাও যেখানে অনিরাপত্তার দুঃশ্চিন্তা ছাড়াই তাদের শিশুদের নিয়ে যেতে পারবে তাহলে সেটা শিশুদের শারিরীক-মানসিক বিকাশের জন্য অনেক সহায়ক হবে। বরগুনা জেলার পার্শবর্তী জেলাগুলার দিকে যদি তাকাই দেখতে পাই বরিশাল, পটুয়াখালি, ঝালোকাঠি, পিরোজপুর জেলাগুলোতে রয়েছে শিশুদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক। অথচ ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ১৯৩৯.৩৯ বর্গ কি.মি. আয়তনের বরগুনা জেলায় শিশুদের জন্য একটিও বিনোদন কেন্দ্র নেই। এটি আমাদের বরগুনাবাসীর জন্য একটি অত্যন্ত লজ্জাজনক বিষয়। আমাদের এ জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে মোট ১৩৩২ টি যার মাঝে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাই ৮১৪ টি। কিন্তু শিক্ষার পাশাপাশি যদি শিশুরা না পায় নির্মল বিনোদন তবে সেই শিক্ষা মূলত পূঁথিগতই রয়ে যাবে। তাছাড়া বরগুনা শহরে এমন কিছু স্থান রয়েছে, যা মূলত মাদক সেবন ও অপরাধীদের আখড়া হয়ে উঠছে। সে জায়গাগুলোর কোন একটিকে প্রয়োজনমত সংস্কার বা দখলমুক্ত করে তৈরি করা যেতে পারে শিশুদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র।”

ঐ দিনই বরগুনা পুলিশ সুপার বিজয় বসাক -এর তত্ত্বাবধানে সুশীল সমাজ, শীক্ষার্থী, শিশু, অভিভাবক, রাজনৈতিক নেতা, কতৃপক্ষ এবং এ্যলামনাই ফেলোদের প্রতিনিধিত্বে একটি ছোট কমিটি গঠন করা হয়। ১ জুলাই থেকেই নবগঠিত কমিটি কাজ শুরু করে।

অবশেষে আগস্টে স্থাপিত হল বরগুনার প্রথম শিশু পার্ক। ফেলো এ্যলামনাই এ্যসোসিয়েশন, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল -এর আয়োজনে শিশু পার্ক স্থাপনে অবদানের জন্য বরগুনা পুলিশ সুপার বিজয় বসাক এবং বরিশাল রিজিওনাল অফিস, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল কে সম্মাননা জানায় ফেলো এ্যলামনাই এ্যসোসিয়েশন। এ আয়োজনে শিশু পার্কটির ভবিষ্যত রক্ষণাবেক্ষণ ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বরগুনার প্রথম শিশু পার্ক স্থাপনে সুশীল সমাজ, শীক্ষার্থী, শিশু, অভিভাবক, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিকবৃন্দ, কতৃপক্ষ এবং এ্যলামনাই ফেলোদের এক সমন্বিত অবদান ফুটে ওঠে, সেই সাথে পূর্ণ হয় বরগুনার শিশু তথা সকলের স্বপ্ন।