কাজ করার জন্য সারা বিশ্বের তরুণদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে গুগল। ব্যবসায় প্রশাসন, তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ও প্রকৌশল—সব বিভাগের শিক্ষার্থীর কাছে কর্মক্ষেত্র হিসেবে এক নম্বর পছন্দ বহুজাতিক ইন্টারনেট ও সফটওয়্যার নির্মাতা এই প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে গোল্ডম্যান স্যাকস এবং অ্যাপল। আর গুগলের পরে প্রকৌশল-আইটি নিয়ে পড়ালেখা করা তরুণদের পছন্দ হলো মাইক্রোসফট ও অ্যাপল।
কর্মক্ষেত্র-বিষয়ক বহুজাতিক ব্র্যান্ডিং প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাম প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ডস মোস্ট অ্যাটাকটিভ এমপ্লয়ার্স’ শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যবসায় প্রশাসন ও প্রকৌশল বিষয়ে পড়ালেখা করছেন এমন প্রায় ৩ লাখ তরুণের মতামতের ভিত্তিতে এই জরিপটি তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রকৌশল ও আইটি নিয়ে পড়ালেখা করা তরুণের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার, আর ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়ালেখা করছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার তরুণ। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত সময়ে জরিপের মতামত নেওয়া হয়।
পড়ালেখার ভিন্নতার কারণে পছন্দের কর্মক্ষেত্রের দুটি তালিকা তৈরি করেছে ইউনিভার্সাম। দুই শ্রেণিতেই তরুণদের পছন্দের কর্মক্ষেত্রের মর্যাদা পেয়েছে গুগল। ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষ দশে থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো যথাক্রমে গোল্ডম্যান স্যাকস, অ্যাপল, আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং (ইঅ্যান্ডআই), প্রাইসওয়াটারহাউজকুপারস (পিডব্লিউসি), ডেলয়েট, মাইক্রোসফট, লরিয়েল, কেপিএমজি ও জেপি মরগ্যান। আর কর্মক্ষেত্র হিসেবে প্রকৌশল ও আইটি শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষ দশে আছে যথাক্রমে মাইক্রোসফট, অ্যাপল, জেনারেল ইলেকট্রিক, বিএমডব্লিউ, আইবিএম, ইন্টেল, সিমেন্স, সনি ও স্যামসাং।
গুগলের মতো বেশ কটি প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের মূলত পছন্দ বহুজাতিক নিরীক্ষা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই বিভাগের তরুণদের পছন্দের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের পাঁচটিই নিরীক্ষা ও আর্থিক খাতের। তবে একক খাত ধরে ব্যবসায় প্রশাসনের তরুণদের পছন্দের শীর্ষে আছে ব্যবস্থাপনা ও কৌশলগত পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। ২৮ শতাংশ তরুণ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ব্যাংকিংয়ে ২৫ শতাংশ, আর্থিক খাতে ২৩ শতাংশ, নিরীক্ষা ও হিসাব প্রতিষ্ঠানে ১৯ শতাংশ তরুণ কাজ করতে চান।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, প্রকৌশল ও আইটিতে পড়ালেখা করা তরুণদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে প্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ২৩ শতাংশ তরুণ সফটওয়্যার, কম্পিউটার-বিষয়ক সেবা, মাল্টিমিডিয়া ও ডিজিটাল বিনোদন নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান। এ ছাড়া শিল্প প্রকৌশল ও উৎপাদনে ২১ শতাংশ, উড়োজাহাজ প্রকৌশলশিল্পে ২০ শতাংশ, গাড়ি নির্মাণশিল্পে ১৭ শতাংশ এবং জ্বালানি খাতে ১৬ শতাংশ তরুণ কাজ করতে চান।
প্রতিষ্ঠিত বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করার আগ্রহের পাশাপাশি জরিপে অংশ নেওয়া ৭৪ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, কর্মীর সংখ্যা ১ হাজারের নিচে আছে এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে তাঁরা বেশি আগ্রহী। এর কারণ ব্যাখ্যায় জরিপে বলা হয়েছে, এখনকার তরুণেরা কোম্পানির উন্নতিতে বেশি অবদান রাখতে চান। তাঁদের ধারণা, বেশি বড় কোম্পানিতে কাজ করলে যথেষ্ট প্রভাব বা অবদান রাখা সম্ভব হয় না। তাই মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠান তাঁদের কর্মজীবনের জন্য ভালো।
এখনকার তরুণ প্রজন্ম কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য রক্ষায় অনেক বেশি সচেতন বলে জরিপের তথ্যে উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে ৫৩ শতাংশ তরুণ এ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কর্মক্ষেত্র নির্বাচনে নিরাপত্তা ও চাকরির নিশ্চয়তাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন ৪২ শতাংশ তরুণ। এ ছাড়া নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ, প্রতিযোগিতামূলক কাজের পরিবেশ ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারাকে উৎসাহিত করার বিষয়গুলোকে কর্মক্ষেত্র নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তরুণেরা।
সূত্রেঃ প্রথম আলো.