অধিকাংশ পুলিশ অফিসার এবং সদস্য সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার কথা বিবেচনা করে ঢাকার বাইরে যেতে চান না। এ সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগের আশাও ব্যক্ত করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক। এ ছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে পুলিশের চাকরিকে আকর্ষণীয় করতে বিভাগীয় শহরগুলোতে পুলিশ সদস্যদের জন্য মানসম্মত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি।
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘চলমান করোনাকালে গত তিন মাসে পুলিশ বদলে গিয়েছে। পুলিশ জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। করোনায় পুলিশ জনগণের পাশে গিয়ে যেভাবে সেবা দিয়েছে, এর বেশিরভাগই পুলিশের কাজ ছিল না, এজন্য পুলিশকে বলাও হয়নি, নির্দেশও দেওয়া হয়নি। কিন্তু পুলিশ এ কাজটি করেছে একান্তই নিজের দায়িত্ববোধ থেকে।’
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পুলিশ এত সম্মান, এত মর্যাদা আর কখনো পায়নি, গত তিন মাসে যা পেয়েছে মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, ‘এখন জনগণ পুলিশের পক্ষে কথা বলছে, পুলিশের জন্য লিখছে, যারা কথায় কথায় পুলিশের সমালোচনা করতেন, তারাও আজ পুলিশের পক্ষে হৃদয় উজাড় করে বলছেন, পুলিশকে সমর্থন করেছেন। যে সম্মান মর্যাদা আমরা গত তিন মাসে পেয়েছি তা টাকা দিয়ে কেনা যায় না, মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে মানুষের সাথে থাকতে হয়, তাদের কাছে যেতে হয়, মানুষকে ভালোবাসতে হয়।’
সভায় পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বেনজীর বলেন, ‘একদিন করোনা চলে যাবে, এরপর কি হবে, আমরা কি আবারও আমাদের আগের স্বরূপে আবির্ভূত হবো?’ সহকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ আর পেছনে ফিরে যাবে না, জনগণের সম্মান ও ভালোবাসা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’
পুলিশ প্রধান বলেন, ‘জনগণের পুলিশ হতে হলে কী করতে হবে? পুলিশকে সকল ধরনের দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। পুলিশে কোনো দুর্নীতিবাজের ঠাঁই নেই। মাদকের সাথে কোনো পুলিশ সদস্যের সম্পর্ক থাকবে না। পুলিশকে হতে হবে মাদকমুক্ত। পুলিশের নিষ্ঠুরতা বন্ধ করে আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। পুলিশকে যেতে হবে জনগণের দোড়গোড়ায়। পুলিশ অফিসার এবং ফোর্সেরও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ চিকিৎসায় গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মাত্র দুই সপ্তাহে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৫০০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য মাত্র ১২ দিনে পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকায় একটি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় হাসপাতাল আধুনিকায়ন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ সদস্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য আবাসন ব্যবস্থা এবং ডিউটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে পুলিশ সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কমেছে এবং মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে।’
আইজিপি তার বক্তব্যের শুরুতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গকারী ৪৬ জন শহীদ পুলিশ সদস্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। আইজিপি এসব পরিবারের অংশ হিসেবে সুখ- দুঃখে তাদের সাথে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ডিএমপির সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তাগণ (ওসি) উপস্থিত ছিলেন।