২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাত যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে; বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির কথা বিবেচনায় এ খাতটিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা আজ বৃহস্পতিবার বাজেট উপস্থাপনায় উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবারের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাজেট ঘিরে ফেসবুক-গুগল-ইউটিউবকে করের আওতায় আনা, ই-কমার্সে ভ্যাট আরোপসহ বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে। সেগুলোর বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো :
করের আওতায় আসবে গুগল-ইউটিউব-ফেসবুক
অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন এবং ভার্চ্যুয়াল ও ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের কারণে আন্তসীমান্ত লেনদেনের ধরন ও আকারে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আমাদের অর্থনীতি এখন অনেক বেশি উন্মুক্ত। ফলে কর পরিহারের ঝুঁকিও বেড়েছে। ভার্চ্যুয়াল ও ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রচুর আয় করছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে আমরা তেমন একটা কর পাচ্ছি না। ভার্চ্যুয়াল ও ডিজিটাল লেনদেনের বিষয়টি তুলনামূলকভাবে নতুন বিধায় এসব লেনদেনকে করের আওতায় আনার মতো পর্যাপ্ত বিধান এত দিন আমাদের কর আইনে ছিল না। আমি ভার্চ্যুয়াল ও ডিজিটাল খাত যেমন ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব ইত্যাদির বাংলাদেশ অর্জিত আয়ের ওপর কর আরোপের জন্য আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে প্রয়োজনীয় আইনি বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করছি। এর ফলে করের আওতা বাড়বে।
তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা দিতে খরচ বাড়বে
এবারের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ওপর সাড়ে ৪ শতাংশের বদলে ৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপের প্রস্তাব করেছে। এর ফলে যেসব সেবা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে, তাদের কর দিতে হবে বেশি। অর্থাৎ গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ানির্ভর যেসব ব্যবসা রয়েছে, সব কটি করের আওতায় চলে আসবে। এমনকি দেশে বিকাশমান রাইড শেয়ারিং সেবাগুলো এর আওতায় আসবে।
করের আওতায় ভার্চ্যুয়াল ব্যবসায়ীরা
এফ-কমার্স, ই-কমার্সসহ দ্রুত বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা। সরকার এ ধরনের ব্যবসায় কর বসাতে চাইছে। চলতি বছরের বাজেট অধিবেশনে ভার্চ্যুয়াল ব্যবসায় কর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান ইন্টারনেট বা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয় বেড়েছে। এই পণ্য বা সেবার পরিসরকে আরও বাড়াতে ভার্চ্যুয়াল বিজনেস নামের আরেকটি সেবার সংজ্ঞা সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফলে অনলাইনভিত্তিক যেকোনো পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তরকে এই সেবার অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। ভার্চ্যুয়াল ব্যবসা সেবার ওপর ৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপের প্রস্তাব করেছেন তিনি। ভার্চ্যুয়াল ব্যবসার যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হচ্ছে, তাতে ই-কমার্স খাত পড়বে। তাই এ খাতে কর আরোপের প্রস্তাবে ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিদেশি সফটওয়্যারের খরচ কমবে
এবারের বাজেটে সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে বিদেশি সফটওয়্যারের দাম কমবে, এ কথা বলা যায়। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, দেশে তৈরি হয়না এমন সফটওয়্যার, যেমন ডেটাবেজ, প্রোডাকটিভিটি সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক সর্বক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ডেটাবেজ, অপারেটিং সিস্টেম, ডেভলমেন্টস টুল, প্রোডাক্টিভিটি, অটোমেটিক ডেটা প্রসেসিং মেশিনের জন্য কমিউনিকেশন বা কোলাবরেশন সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন সফটওয়্যারে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আগে এসব সফটওয়্যারে কাস্টমস ডিউটি ছিল ২৫ শতাংশ আর ভ্যাট ১৫ শতাংশ। শুল্ক কমানোর ফলে বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারের খরচ কমবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা
আগামী বাজেটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১৮ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং টেলিযোগাযোগ বিভাগ মিলিয়ে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এ খাতের ইন্টারনেট অবকাঠামো তৈরি, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এবারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বাজেট বাস্তবায়নে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণাধর্মী কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে খুলনা, বরিশাল, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারের শাখা স্থাপনের কাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজন বৃদ্ধি ও বিষয়ভিত্তিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদকে (বিসিএসআইআর) একটি সেন্টার অব এক্সিলেন্স ও সেন্টার ফর টেকনোলজি ট্রান্সফার অ্যান্ড ইনোভেশন হিসেবে রূপান্তর করা হচ্ছে।