তত্ত্বাবধায়ক স্বপ্নই থাকবে, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী: আ.লীগ

:
: ১ বছর আগে

সংবিধানবিরোধী কোনও দাবি আওয়ামী লীগ মানবে না জানিয়ে দলের নেতারা বলেছেন, বিএনপিসহ যেসব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বপ্ন দেখছেন, তাদের সে স্বপ্ন বাংলার মাটিতে আর বাস্তবায়ন হবে না।

নির্বাচন ছাড়া কোনও সরকার উৎখাত করা যাবে না এবং নির্বাচনই ক্ষমতা বদলের একমাত্র পথ জানিয়ে তারা বিএনপিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ারও আহ্বান জানান।

শনিবার (৪ মার্চ) রাজধানীর ১০টি জায়গায় পৃথক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের নেতারা এ কথা বলেন। এসব সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে চারটি সমাবেশ উত্তরে আর দক্ষিণে ছয়টি স্থানে নির্বাচনী আসন ধরে সমাবেশ হয়েছে। সব থানা থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে এই ছয় সমাবেশে যোগ দেন।

মহানগর উত্তরে চারটি সমাবেশের মধ্যে মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর, মোহাম্মদপুর টাউন হল, মধ্য বাড্ডা ও উত্তরার আমির কমপ্লেক্সের সামনে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশগুলো হয়েছে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, শ্যামপুর রেলগেট, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, ঢাকেশ্বরী বালুর মাঠ, মুগদা স্টেডিয়াম ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে টাউন হলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘বিএনপি জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য ও অপপ্রচারের’ প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নির্বাচন ছাড়া কোনও সরকার উৎখাত করা যাবে না। নির্বাচনই হল ক্ষমতা বদলের একমাত্র পথ। কাজেই যতই ষড়যন্ত্র করেন, সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।’

তিনি ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানান।

সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, যারা হ্যাঁ-না ভোট করেছিল রাতের অন্ধকারে। যারা নিজেরা ভোট করে নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করেছিল বিরোধীদলকে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়নি। সেই ওরা আমাদের গণতন্ত্র শেখায়।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী নানক বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব যে রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র করছেন, সেই ষড়যন্ত্রের পথকে পরিহার করে পরিত্যাগ করে গণতন্ত্রের পথে আসুন, নির্বাচনের পথে আসুন।

শান্তি সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা এক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি টাউন হল থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে শেষ হয়। শান্তি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মিয়া চাঁন। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবাহান গোলাপ, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাদেক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা, সহ দপ্তর আব্দুল আওয়াল শেখ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজিসহ স্থানীয় নেতারা।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশে’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, বিএনপি কেবল সরকার পতনের লক্ষে কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নামেনি। তারা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে মাঠে নেমেছে।

তিনি বলেন, বিএনপিসহ যেসব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বপ্ন দেখছেন, তাদের সে স্বপ্ন বাংলার মাটিতে আর বাস্তবায়ন হবে না। এদেশে সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে অবশ্যই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী দেখতে চাই।

একটা দানবীয় শক্তি সরকার পতনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সংবিধানবিরোধী কোনও দাবি মানবে না আওয়ামী লীগ। তাদের ক্ষমতা ভাগাভাগির স্বপ্ন পুরো হবে না।

উত্তরার আজমপুর আমিন কমপ্লেক্সের সামনে শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। এসময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল রাজপথেই থাকবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা নেতৃত্বে জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শীলা প্রমুখ।

রাজধানীর বাড্ডায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। এসময় নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, প্রয়োজনে বিএনপির সঙ্গে অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তারা আন্দোলন কর্মসূচির নামে গরম বক্তব্য দিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করছে। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাদের খান, বশিরউদ্দিন আহমেদ, আবুল কাসেম প্রমুখ।

ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের ঢাকা-১০ সাংগঠনিক টিম আয়োজিত শান্তি সমাবেশে বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে শেখ ফজলে নুর তাপস বলেন, যারা বিদ্যুৎ দিতে পারেনি, খাম্বা দিয়েছে। পাঁচ বছরে ৬ বার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। সংবিধানকে ভুলন্ঠিত করেছে। আপনাদের জন্মই সংবিধানের বাইরে, গণতন্ত্রের বাইরে। আপনারা কোনদিন গণতন্ত্র মানবেন না এটাই স্বাভাবিক।

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দেওয়া হবে না তবে সহিংসতা করলে বাংলার জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না বলেও হুঁশিয়ারি করেন তিনি।

তাপস বলেন, রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় হ্যাঁ/না ভোট দিয়েছিল। রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকবে কিনা। ১০০ ভাগের ভোটে ১০৩ ভাগ ভোট পেয়েছিলো, এই হলো তাদের নির্বাচন। ১৯৯৬ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় ভুয়া ভোট করে। খুনি রশিদ-ফারুক-বজলুর রশিদকে বিরোধী দলের নেতা বানায়।

আওয়ামী লীগের ঢাকা-১০ সাংগঠনিক টিমের আহ্বায়ক নুরুল আমিন রুহুলের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

মিরপুর-১ গোল চত্বরে বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যারা দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যারা আঘাত এনেছে; তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

তিনি বলেন, কোনও ভয়-ভীতি বা হুমকি বা অগ্নিসন্ত্রাস দ্বারা তাদের ভয় দেখানো হলে আমরা মেনে নেব না। তার জন্যই আমাদের এই কর্মসূচি। এটি কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। এটি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি।

বিএনপি সন্ত্রাসী কায়দায় আগামী নির্বাচনকে বানচাল করতে চায় মন্তব্য করে নাছিম বলেন, এজন্য তারা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দেশের মানুষ নির্বাচনে বিশ্বাস করে, দেশের মানুষ ভোট দিতে চায়; দেশের জনগণ আগামী নির্বাচনে ভোট দেবে। যদি আগামী নির্বাচনে কেউ কোন প্রকার বানচালের চেষ্টা করে তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা তাদের প্রতিহত করে গণতন্ত্রকে রক্ষা করব।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামছুনাহার চাপা, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।

ডেমরার চৌরাস্তায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও নৈরাজ্য কিছুতেই প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে নেতাকর্মীরা দিনরাত রাজপথে নিজেদের শক্তি দিয়ে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করবে।

ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খান মাসুদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিসবাহুর রহমান ভূঁইয়া রতন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির।

এছাড়া ঢাকা-৭ আসনের ঢাকেশ্বরী বালুর মাঠে (লালবাগ, চকবাজার, কোতোয়ালি ও বংশাল থানা) শান্তি সমাবেশে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা-৯ আসনের মুগদা স্টেডিয়ামে (মুগদা, সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানা) শান্তি সমাবেশে দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, ঢাকা-৫ আসনের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় (যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা) শান্তি সমাবেশে বন পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা-৪ সংসদীয় আসনে শ্যামপুর রেলগেটে (শ্যামপুর ও কদমতলী থানা) শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম উপস্থিত ছিলেন।