ঢাবিতে শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করলো ছাত্রলীগ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের এক শিক্ষার্থীকে দফায় দফায় মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। এতে ওই শিক্ষার্থীর চোখের কর্নিয়া মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত তাকে দফায় দফায় মারধর করা হয়। এতে ভুক্তভোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ডাক্তাতের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়নি। উল্টো হলে এক নেতার কক্ষে আটকে রেখে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। দেয়া হয়নি সকাল ও দুপুরের খাবারও।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম এহসান রফিক। সে ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাকে মারধর করে ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেলের অনুসারীরা।

এ বিষয়ে তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন, অভিযুক্তদের হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। সোহাগ ভাইকে (কেন্দ্রীয় সভাপতি) বিষয়টি অবহিত করেছি। তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে।

আর হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আলম জোয়ারর্দার বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে মার্কেটিং বিভাগের ওমর ফারুকের কাছে প্রায় তিন মাস আগে ধার নেয়া ক্যালকুলেটর চাইতে গেলে উল্টো ক্ষেপে যায় ওমর ফারুক। একপর্যায়ে হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আরিফের (আইইআর) সহযোগিতায় এহসানকে টিভি রুমে ডেকে নেয়া হয়। এ সময় টিভি রুমে উপস্থিত শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি তানিম (আইইআর), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিম ইরতিজা শোভন (উর্দু) ও আবু তাহেরসহ (পপুলেশন সাইন্স) কয়েকজন এহসানকে শিবির অপবাদ দিয়ে মোবাইল কেড়ে নেয়।

জোরপূর্বক পাসওয়ার্ড নিয়ে চেক করা হয় ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। ফেসবুকে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে জোরপূর্বক মৌখিক স্বীকারোক্তি আদায় করে তারা। এ সময় তাকে বেদম মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করে। তারা মৌখিকভাবে এহসানকে হল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে হল গেটে বের করে দেয়। সেখানে আরেক দফায় ছাত্রলীগের হল শাখার সহ সম্পাদক ওমর ফারুক ও রুহুল আমিন, সদস্য সামিউল ইসলাম সামী, আহসান উল্লাহ, উপ-সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেলের নেতৃত্বে রড, লঠিসোটা দিয়ে প্রহার করা হয়। মরধরের এক পর্যায়ে এহসান জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে আরিফ রাত সাড়ে ৩টায় এহসানকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হল শাখা সভাপতি তাহসান আহমেদের (১৬ নম্বর) কক্ষে মারধরের তথ্য প্রকাশ না করতে হুমকি দিয়ে আটকে রাখা হয়। সকালে এহসানের অবস্থার অবনতি হলে ফের তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে হলে এনে একই কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে আহত এহসানের বাবা রফিকুল ইসলাম ও অন্য হলের কয়েক বন্ধুর সহযোগিতায় সে হল থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। এরপর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন এহসান।

এ বিষয়ে আহতের বাবা চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বলেন, এহসানের চোখের কর্নিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। ভবিষ্যতে যেন আর কোনো বাবাকে তার সন্তানকে এভাবে নির্যাতিত অবস্থায় দেখতে না হয়।