সকাল মাত্র ৭টা তখন। আর দিনটিও সাপ্তাহিক ছুটির। অথচ সাতসকালেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেল রাজধানীর উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়কের ৮১ নম্বর বাড়িতে।
একটি প্রাণীকে দেখে বাসার আতঙ্কিত বাসিন্দারা ছোটাছুটি শুরু করলেন। অনেকে বাসা ছেড়ে নিচে নেমে এসে দাঁড়ালেন নিরাপদ দূরত্বে। সাহসী বাসিন্দাদের কেউ কেউ অবশ্য চেষ্টা করলেন প্রাণীটিকে ধাওয়া দিতে আর ভয় দেখাতে। তাতে অসম্ভব ক্ষিপ্রতায় সেটি একতলা থেকে অন্য তলায় ছোটাছুটি করতে লাগল। একপর্যায়ে প্রাণীটি আশ্রয় নিল বাড়ির সিঁড়ির নিচে, পানির পাম্পের রুমে।
বাসিন্দাদের কেউ কেউ প্রাণীটিকে ভেবেছিলেন চিতা বাঘ ওই প্রাণী। কেউ মনে করেছিলেন, বনবিড়াল কিংবা শেয়াল। প্রাণীটিকে ঘিরে দেখা দিয়েছিল উত্তেজনা আর নানা সংশয়। মহানগরের ইট-পাথরের দালানের জঙ্গলে এমন প্রাণীকে দেখে বিস্মিত, ভীত ও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন তারা। এ ভাবেই কেটে যায় শুক্রবার সকালের অন্তত চার ঘণ্টা।
শেষমেশ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে আর প্রাণীটিকে বশে আনতে ব্যর্থ হয়ে ১৩ নম্বর সড়কের বাসিন্দারা সাহায্য চান 'জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯' নম্বরে ডায়াল করে। ফোন পেয়ে ছুটে আসে উত্তরা ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা। এক ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জীবিতই ধরতে সক্ষম হয় সেটিকে। আর জানা যায়, শিশু-কিশোরদের গল্পের বিখ্যাত সেই শিয়াল পণ্ডিত সে।
বাড়িটির নিরাপত্তা কর্মী মো. রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে তিনি হঠাৎ করেই দেখতে পান চিতার মতো একটি প্রাণী নিচতলায় ছোটাছুটি করছে। তাড়াতে গেলে সেটি উল্টো তেড়ে আসে। লাফিয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। তখন 'বাঘ বাঘ' বলে চিৎকার করে বাড়ির বাসিন্দাদের সতর্ক করেন তিনি।
নিরাপত্তা কর্মী বলেন, লোকজন দেখে শিয়ালটি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। আতঙ্কে বাসিন্দাদের কেউ কেউ ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা আটকে দেন। কেউ আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে আসেন। ছুটির সকাল থাকায় আশপাশের বাড়ির লোকজনও জড়ো হয়ে সেটিকে ধরার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হলে বাড়ির মালিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে সহায়তা চান।
উত্তরা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ওই বাড়িতে যান। শিয়ালটি তখন পানির পাম্পের পাশে আক্রমণাত্মক অবস্থায় ছিল। সেটিকে অনায়াসে মেরে বশে আনা সম্ভব হলেও উদ্ধার কর্মীরা তা না করে জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা চালান। ভারী হ্যান্ডগ্লাফস, হেলম্যাট ও মাস্ক পরে ঝুঁকি নিয়ে শিয়ালটিকে এক ঘণ্টার চেষ্টায় জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে সেটিকে ১৮ নম্বর সেক্টরের উন্মুক্ত এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। বড় আকৃতির শিয়ালটি লম্বায় প্রায় তিন ফুট। তাই বাসিন্দাদের কেউ কেউ এটিকে চিতা বাঘ ভেবেছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, শিয়ালটি হয়তো ক্ষুধার্ত থাকায় বেশ ক্ষ্যাপাটে ছিল। বাড়িটির লোকজনকে সেটি আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছিল।
বাড়ি মালিক প্রকৌশলী জাভেদ আলী বলেন, বাড়ির প্রধান ফটকের নিচে কয়েক ইঞ্চি ফাঁকা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ফাঁক দিয়েই সেটি বাসার ভেতর ঢুকে লঙ্কাকাণ্ড ঘটায়। রাজধানীতে খোলা অবস্থায় বিলুপ্তপ্রায় এমন বণ্যপ্রাণীর দেখা পাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছিল ভয়-ভীতি ও মিশ্র কৌতূহল।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com